Ticker

6/recent/ticker-posts

পরকাল দর্শন - পরকাল বলে কিছু আছে কি? (পর্ব -৩)

পরকাল-বলে-কিছু-আছে

পরকাল দর্শন - পরকাল বলে কিছু আছে কি? (পর্ব -৩)

পরকাল দর্শন- প্রথম পর্ব

পরকাল দর্শন- দ্বিতীয় পর্ব

পরকাল সম্পর্কীয় ধারণা সাধারণত পাওয়া যায় ধর্মগ্রন্থগুলি থেকে। বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা এ বিষয়ে বিভিন্ন ধারণা পোষণ করেন। এসব মতগুলির একটির সাথে অন্যটির কোন মিল নেই বরং পরস্পর বিরোধী। এসব ধারণাগুলি পরস্পর বিরোধী হলেও, আমরা বাস্তবে যা দেখি তা হল, প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীরাই স্ব স্ব ধারণাটিকে সঠিক বা সত্য বলে ধরে নেয়।

মানুষের সব ধারণা কিন্তু সব সময় সঠিক হয় না। ধারণা সঠিক হলে বা ধারণার সাথে বাস্তবের মিল থাকলে তাকে জ্ঞান বলে, আর মিল না থাকলে সেটি শুধু ধারণা মাত্র, জ্ঞান নয়। আবার এটাও একটা বৈজ্ঞানিক সত্য কথা যে, কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে পরস্পর বিরোধী একাধিক মত বা ধারণা একসাথে কখনও সত্য হতে পারে না। যেমন- একটি অংকের অনেকগুলি উত্তর একসাথে কখনও সত্য হতে পারে না। কোন একটি অংকের একাধিক উত্তর এসে গেলে একজন গণিতবিদ গণিতের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলি প্রয়োগ করে সেখান থেকে সঠিক উত্তরটি বেছে নেন। বাকীগুলি বাদ পড়ে যায়। আবার এমনও হতে পারে যে, একাধিক উত্তরের একটিও সঠিক নয়। তখন গণিতবিদ সংশ্লিষ্ট নিয়মগুলো প্রয়োগ করে সঠিক উত্তরটি বের করে নেন। এক্ষেত্রে একাধিক ভুল উত্তরগুলির সবকয়টিই বাদ পড়ে যায়। 

কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কেও মানুষ যখন একাধিক পরস্পর বিরোধী ধারণা পোষণ করেন তখন চিন্তাশীল ব্যক্তির উচিত হল এসব ধারণাগুলি থেকে কোন ধারণাটি সঠিক তা সত্য-মিথ্যা নির্ধারণের যৌক্তিক সুত্রগুলো প্রয়োগ করে বের করে নেয়া। আর যদি দেখা যায় যে, প্রচলিত ধারণাগুলির কোনটিই সঠিক নয় তাহলে সবগুলি বর্জন করে সঠিকটির অনুসন্ধান করা উচিত।

আমাদের মনের ধারণাগুলি সাধারণত অর্জিত। পরকাল সম্পর্কিত ধারণাগুলি অভিজ্ঞতা কিংবা বুদ্ধিপ্রসূত নয়। এগুলো সাধারণত ছোটবেলায় পিতামাতার কাছ থেকে লাভ করা এবং ক্রমান্বয়ে ধর্মগ্রন্থ (যদি পড়ার সুযোগ হয় তা) থেকে লাভ করা। পরকাল সম্পর্কিত ধারণার ব্যাপারে মানুষ সাধারণত ছোটবেলার অর্জিত ধারণাটিকে নির্ভেজাল সত্য বলে ধরে নেয় এবং পরে আর কখনও তা যাচাইয়ের প্রয়োজনবোধ করে না। কিন্তু আমরা বড় হয়ে যখন দেখি যে, আমাদের সমাজে কিংবা বিশ্বে বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে এ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন ধারণা প্রচলিত আছে এবং প্রত্যেকে নিজেদেরটিকে সঠিক বলে ধরে নিচ্ছে তখন স্বীয়ধারণাটিকে নির্বিচারে গ্রহণ না করে যাচাই করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে জ্ঞান অনুসন্ধিৎস্যু ব্যক্তির উচিত বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাওয়া ধারণাগুলিকে সামনে রেখে এগুলোর উৎস, যৌক্তিকতা, সার্বজনীনতা, নির্ভরযোগ্যতা, এবং এগুলোর মধ্যে কোন মতটি নৈতিক বিচারের দাবি কতটুকু পুরন করে তা পরীক্ষা করে দেখা। এ ধরনের অবস্থায় যদি কোন ব্যক্তি তার নিজের মধ্যে লালন করা ধারণাটিকে মোটেও পরীক্ষা করার প্রয়োজনবোধ না করেন তাহলে এরূপ ব্যক্তির অবস্থা হল ঐ ব্যক্তির মত যিনি কোন একটি অংকের পরস্পর বিরুধী অনেকগুলি উত্তর হতে যে কোন একটি উত্তরকে নির্বিচারে গ্রহণ করে নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেন অথচ তিনি জানেন না সেই উত্তরটি আদৌ সঠিক কি না ? এরূপ ব্যক্তিকে, দর্শনের ভাষায়, নির্বিচার নিদ্রায় আচ্ছন্ন বলা যেতে পারে। আর এরূপ নিদ্রিত ব্যক্তির নিদ্রা ভঙ্গ করা অন্যের পক্ষে কঠিন কাজ। 

এখানে যে বিষয়টি প্রত্যেকের বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন তা হলো- আমি আমার পূর্বপরুষদের কাছ থেকে কিংবা ধর্মগ্রন্থ থেকে কি লাভ করেছি তা বড় কথা নয় বরং আমি কতটুকু সত্য লাভ করেছি তাই হল আসল বিষয়। তাই আমার ধারণাটি সত্য-মিথ্যার বিচারে কতটুকু নির্ভরযোগ্য তা যাচাই করা প্রত্যেকেরই কর্তব্য। 

বহুব্রীহি-অনলাইন-কোর্স
বহুব্রীহি অনলাইন কোর্স 


আমাদের সমাজে পরকালে বিশ্বাসীদের মধ্যে পরকাল সম্পর্কে দু’ধরনের ধারণা ও বিশ্বাস প্রচলিত আছে। বেদ পুরাণের অনুসারীরা জন্মান্তরবাদের ধারণা পোষণ করেন এবং বিশ্বাস করেন। জন্মান্তরবাদ বলতে একই ব্যক্তির পুনঃ পুনঃ জন্মলাভ করাকে বুঝায়। প্রথম জন্মে ভাল কাজ করলে দ্বিতীয় জন্ম ভাল ও উন্নত হবে। আর প্রথম জন্মে খারাপ কাজ করে অপরাধী সাব্যস্ত হলে শাস্তি স্বরূপ খারাপ জন্ম লাভ করবে। অর্থাৎ ভাল ও উন্নত জীবন হবে না পশু পাখীর জীবন লাভ করতে হবে। এটাই জন্মান্তরবাদের মুলকথা। পরকাল সম্পর্কীয় দ্বিতীয় মতটি হলো কোরআনিক মত। এই মতের উৎস হলো পবিত্র কোরআন। কোরআনে পরকাল সম্পর্কে পুনরুত্থানের কথা বলা হয়েছে, পুনর্জন্মের   কথা বলা হয়নি। পুনরুত্থান আর পুনজন্ম এক কথা নয়। এ ক্ষেত্রে দু’টি মতের মধ্যে বিরোধ আছে। পুনরুত্থান বলতে মাতৃগর্ভ থেকে পুনরাগমন বুঝায় না। পুনরুত্থান হলো পুন-সৃষ্টি। একই ব্যক্তিকে পুনরায় হাজির করা।

মানুষকে মহান স্রষ্টা হুবহু একই রকম করে সৃষ্টি করে তাঁর সামনে হাজির করবেন। এটা এত হুবহু হবে যে, একই মাঠে যখন সকল মানুষকে উপস্থিত করা হবে তখন প্রত্যেক মানুষই তাদের পরিচিত জনকে চিনে ফেলবেন। সন্তানরা তাদের পিতা-মাতাকে চিনবে। পিতা মাতা তাদের সন্তান-সন্ততিদের চিনবেন। নির্যাতনকারীকে নির্যাতিতরা চিনে ফেলবে। নিহত ব্যক্তি তার হত্যাকরীকে চিনবে এবং তার বিরূদ্ধে সরাসরি অভিযোগ উত্থাপন করবে। বিশ্বজগতের প্রতিপালক ও পরাক্রমশালী আল্লাহতাআলা নিজেই সেদিন বিচারকার্য পরিচালনা করবেন। পূণ্যবান ও  ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিরা ইহকালীন জীবনের শ্রম ও ত্যাগের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহ লাভে ধন্য হবেন। আর অপরাধীরা তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ শাস্তি পাবেন। কোন অপরাধীই সেদিন বাঁচতে পারবে না।

ন্যায়ের সকল দাবীগুলি পরিপূর্ণ ও নিঁখুতভাবে পুরন করা হবে। কারো প্রতি কোনরূপ অবিচার করা হবে না। এটাই কোরআনিক মত। 

এখানে একটি প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই আসতে পারে তা হলো পরকালীন জীবন যদি মানবজীবনের একটি আবশ্যিক অধ্যায় হয়ে থাকে তাহলে এ জীবনের জ্ঞানের উৎস কোরআন হবে কেন ? আমাদের স্বাভাবিক জ্ঞান, বুদ্ধি, অভিজ্ঞতা বিবেক এগুলোর সাহায্যে কি পরকাল সম্পর্কে জানা যায় না? এগুলো কি এক্ষেত্রে একেবারেই ব্যর্থ? এটি একটি দার্শনিক প্রশ্ন। চিন্তাশীল ব্যক্তির মনে এ প্রশ্ন জাগতে পারে। 

এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে এ প্রসঙ্গে জ্ঞানের উৎসগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা প্রয়োজন। জ্ঞানের প্রথম উৎস হলো- অভিজ্ঞতা। অভিজ্ঞতার মাধ্যম হলো ইন্দ্রিয়। বস্তু ইন্দ্রিয়ের সংস্পর্শে আসলে বস্তুটির উপস্থিতি সম্পর্কে প্রাথমিক অনুভূতি স্নায়ুর মধ্য দিয়ে মস্তিষ্কে পৌছে। পরে মস্তিষ্কের স্মৃতিতে ধারণকৃত পূর্বের ধারণার সাথে মিলিয়ে বস্তুটির সম্পর্কে যে জ্ঞান হয় তাকে বলে অভিজ্ঞতা। কাজেই অভিজ্ঞতার জন্য ইন্দ্রিয়ের প্রয়োজন। আবার জ্ঞানের বিষয়বস্তুকে ইন্দ্রিয়ের সংস্পর্শে আসাও প্রয়োজন। যে বস্তু ইন্দ্রিয়ের আওতায় আসেনি তার সম্পর্কে কোন অভিজ্ঞতা হতে পারে না।

জ্ঞানের আর একটি উৎস হলো- বুদ্ধি বা চিন্তা। চিন্তা হলো বিশ্লেষণ ক্ষমতা। চিন্তা বা বুদ্ধির উপকরণ আসে অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে প্রাপ্ত ধারণাকে বিচার বিশ্লেষণ করে আন্তর্বিরোধমুক্ত করা ও সুসংহত করাই বুদ্ধি বা চিন্তার কাজ। যেমন- ব্ল্যাকবোর্ডে শিক্ষক যখন ৭+৫ লিখেন তখন শিক্ষার্থীর ইন্দ্রিয় শুধু ৭+৫ এর চিত্রই গ্রহণ করে তা মস্তিষ্কে পাঠায়। এখানে ৭+৫ সম্পর্কে যে জ্ঞান তা হলো অভিজ্ঞতা। এর পর শিক্ষার্থী বুদ্ধি বা চিন্তাশক্তির ব্যবহার করে গাণিতিক সূত্রের সাহায্যে ফলাফল স্বরূপ ১২ পেয়ে থাকে। এটাই বুদ্ধির কাজ। এভাবে জ্ঞানের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা এবং বুদ্ধির ব্যবহার হয়ে থাকে।

কিন্তু পরকাল সম্পর্কীত জ্ঞান অভিজ্ঞতা কিংবা বুদ্ধির সাহায্যে পাওয়া যায় না। যা ইন্দ্রিয়ের আওতাভুক্ত নয় তার কোন ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান আশা করা যায় না। যা আমাদের জীবনে এখনও ঘটেনি, ভবিষ্যতে ঘটবে তার কোন অভিজ্ঞতা থাকতে পারে না। কাজেই অভিজ্ঞতার সাহায্যে পরকালের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চেষ্টা করা আর অভিজ্ঞতার অভাবে পরকালের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা দুটোই নেহাৎ বোকামী।

বুদ্ধির সাহায্যেও পরকালের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায় না। কারণ বুদ্ধি প্রয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ আসে  অভিজ্ঞতা থেকে। পরকালের অস্তিত্ব সম্পর্কে অভিজ্ঞতালব্ধ কিছুই পাওয়া যায় না। তাই এক্ষেত্রে বুদ্ধি প্রয়োগেরও কোন সুযোগ নেই। তবে বুদ্ধির সাহায্যে আমরা পরকালের প্রয়োজনীয়তা ও যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারি কিন্তু অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায় না। চিন্তা বা বুদ্ধির সাহায্যে পরকালের স্বরূপ সম্পর্কে কিছুই বলা সম্ভব নয়। আসলে অভিজ্ঞতা বা বুদ্ধির সাহায্যে আমরা আমাদের জীবনের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছুই বলতে পারি না। কোন মানুষই তার জীবনে আগামীকাল কি ঘটবে তা জানে না। রানা প্লাজায় নিহত শ্রমিকগুলো যদি এক ঘন্টা আগেও তাদের জীবনের এই করুন পরিনতি সম্পর্কে জানতে পারতো তাহলে তারা অবশ্যই বাঁচার চেষ্টা করতো এবং বাঁচতেও পারতো।

পরকালের জ্ঞানের উৎসঃ

অভিজ্ঞতা ও বুদ্ধি ছাড়া জ্ঞানের আরও একটি উৎস আছে। এটি হলোঃ সরবরাহকৃত তথ্য। মানব জীবনের বহু জ্ঞানই সরবরাহকৃত তথ্য থেকে আসে । আমরা দৈনন্দিন জীবনে সবসময়ই দূরবর্তী কিংবা অতীত কোন বিষয় সম্পর্কে জানতে এই সরবরাহকৃত তথ্যের উপর নির্ভর করি। যেমন- 

নিউইয়র্ক সিটির এই মুহুর্তের তাপমাত্রা কত? এ প্রশ্নে উত্তর বাংলাদেশে বসে আমার পক্ষেঅভিজ্ঞতা কিংবা বুদ্ধির সাহায্যে দেওয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে নিউইয়র্কে বসবাসকারী কোন ব্যক্তি অথবা কোন সংবাদসংস্থার সরবরাহকৃত তথ্যের উপর আমাকে নির্ভর করতে হবে। 

তাজমহল দেখতে কেমন এবং কোন নদীর তীরে অবস্থিত? এ প্রশ্নের উত্তর আমি তাজমহল দেখে এসেও দিতে পারি। এভাবে এ প্রশ্নের উত্তর দিলে তা হবে অভিজ্ঞতাপ্রসূত। 

High-speed-router
High Speed Router

কিন্তু তাজমহল কতসালে নির্মিত হয়েছিল? কোন মোঘল সম্রাটের আমলে নির্মিত হয়েছিল? কত শ্রমিক কাজ করেছিল ? কত টাকা ব্যয় হয়েছিল ? এসব প্রশ্নের উত্তর অভিজ্ঞতা বা বুদ্ধির সাহায্যে দেওয়া সম্ভব নয়। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আমাকে অবশ্যই সরবরাহকৃত তথ্যের উপর নির্ভর করতে হবে এবং এ তথ্যের জন্য ইতিহাসের পাতা উল্টাতে হবে। 

আমি আরও একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টিকে আরও একটু পরিষ্কার করে দিতে চাই। মনে করি আপনি কোন একটি ফ্যাক্টরীতে চাকুরী করেন। আপনার বস্ আপনাদের সবাইকে এক দিন এক জরুরী সভায় ডাকলেন। ফ্যাক্টরী সংক্রান্ত সব আলোচনা শেষ করার পর তিনি বললেন “আমি আজ আপনাদের বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা করতে চাই। যে আমার একটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর যে দিতে পারবে তাকে আমি অধিক বুদ্ধিমান বলে মনে করবো।” এ কথা বলে বস্ ড্রয়ার থেকে একটি বাক্স (তালাবদ্ধ অবস্থায় ) বের করলেন এবং টেবিলের উপর রাখলেন। তারপর বললেন “বলুন তো! এ বাক্সের মধ্যে কি আছে ?” 

এবার বলুন এ প্রশ্নের উত্তর আপনারা কি ভাবে দিবেন? টেবিলের উপর বাক্সটি আপনাদের সবার সামনেই আছে। আপনাদের সব ইন্দ্রিয় সক্রিয় আছে, চিন্তা শক্তি বা বুদ্ধিও স্বাভাবিক আছে। তবুও এ প্রশ্নের উত্তর আপনাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ বাক্সের ভিতরের বস্তুটি পর্যন্ত ইন্দ্রিয়গুলির কোনটি পৌঁছতে সক্ষম হচ্ছে না বিধায় ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞান সম্ভব নয়। আবার ইন্দ্রিয়লব্ধ উপকরণের অভাবে বুদ্ধির প্রয়োগও  সম্ভব নয়। 

প্রিয় পাঠক, লক্ষ্য করুন! জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষমতা কত সীমাবব্ধ। অনেক সময় একেবারে সামনের বস্তুটি সম্পর্কেও আমরা ‘কিছুই জানি না’ পর্যায়ে অবস্থান করি। এ প্রশ্নের উত্তর যখন বস দেবেন অর্থাৎ ভিতরের বস্তুটির সম্পর্কে তিনি আপনাদের জানাবেন তখন তা হবে সরবরাহকৃত তথ্য।এ জ্ঞান হবে অভিজ্ঞতা কিংবা বুদ্ধিপ্রসূত নয়,বরং সরবরাহকৃত তথ্য থেকে প্রাপ্ত।

Home-devices
Smart Home Devices from BD-Shop

অভিজ্ঞতা এবং বুদ্ধির সাহায্যে যখন আমরা আমাদের জীবনের নিকট ভবিষ্যত সম্বন্ধেও কিছুই বলতে পারি না তখন পরকাল সম্পর্কে বলা তো একেবারেই অসম্ভব। তাই পরকালের জ্ঞানের উৎস অভিজ্ঞতা কিংবা বুদ্ধি হতে পারে না। এ জ্ঞানের একমাত্র উৎস হলো সরবরাহকৃত তথ্য।

পরকাল সম্পর্কীত কোরআনিক মতের উৎস হলো আল কোরআন। পরকাল মানব জ্ঞানের সীমা বহির্ভূত বিষয়। এ বিষয়ের জ্ঞান আমাদের কাছে আসতে পারে একমাত্র আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে।  যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন কেবলমাত্র তিনিই জানেন আমাদের জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ে কি রয়েছে আমাদের জন্য। আর কোরআন হলো মহান আল্লাহ তাআলার বাণী যাতে মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য ও মানবজীবনের পরিনতি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। 

কোরআনে মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য, এ পৃথিবীতে মানবের কর্তব্য এবং মানবজীবনের চূড়ান্ত পরিণতি তথা মানবজীবনের সার্থকতা ও ব্যর্থতা সম্পর্কে পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা রয়েছে। কোরআনের অনুসারীগণ কোরআনকে মহান আল্লাহতাআলার বাণী বলেই মনে করেন। কোরআনের একটি শব্দও মানুষের রচনা নয়। কোরআনের সূরাগুলির অনুরূপ কোন সূরা মানুষ চেষ্টা করেও রচনা করতে পারবে না।

এখন প্রশ্ন হলো, কোরআনের অনুসারীগণ কিসের উপর ভিত্তি করে কোরআনকে আল্লাহতাআলার বাণী বলে মনে করেন? এরূপ ধারণা বা বিশ্বাসের ভিত্তি কি?  এটা কি প্রমাণিত সত্য না অন্ধবিশ্বাস? 

এ প্রশ্নের উত্তরে আমি আমার পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- কোরআন যে আল্লাহ তা'আলার বাণী, মানব রচিত কোন গ্রন্থ নয় তা কোরআনের অনুসারীগণ অন্ধভাবে মেনে নেননি। কোরআনও তা দাবী করে না। কোরআন যে আল্লাহ তা'আলার বাণী তা বুঝতে হলে কোরআন পড়তে হবে। যিনি তা পড়েননি তিনি এ বিষয়ে বুঝতে পারবেন না। তাই সর্বস্তরের মানুষকে আমি অনুরোধ করতে চাই- কোরআন পড়ুন, অর্থসহ পড়ুন। আরবী ভাষা জানা না থাকলে মাতৃভাষায় পড়ুন। পড়ুন গবেষণামূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে, মনোযোগ ও অভিনিবেশ সহকারে। এর আদেশ / নিষেধগুলির তাৎপর্য অনুধাবন করার চেষ্টা করুন।

কোরআন আপনি যতই পড়বেন এর মর্মস্পর্শী বাণী আপনাকে ততই আকৃষ্ট করবে। আপনার মনে হবে আল্লাহতাআলা আপনার সামনে থেকেই আপনাকে উপদেশ দিচ্ছে। অথবা আপনার মনে হবে আপনার সাথে তাঁর কথোপকথন হচ্ছে।

কোরআনের ভাষা, ছন্দ, শব্দচয়ন, বাক্য-বিন্যাস, তত্ত¡, তথ্য, ভাষার অলংকার, রচনাশৈলী অনেক উন্নত ও অতুলনীয়। অথচ যাঁর মাধ্যমে মানবজাতি কোরআন পেয়েছে, তিনি ছিলেন অক্ষর জ্ঞানহীন। তিনি কারো কাছ থেকে কাখনও আরবী ভাষার অক্ষরজ্ঞানও অর্জন করেননি। তাঁর পক্ষে কখনও এরূপ উন্নত ভাষাশৈলী রচনা করা সম্ভব নয়। এর পরও যদি কেউ জোর দিয়ে এ দাবী করতে চায় যে, পবিত্র কোরআন কোন ব্যক্তিবিশেষের রচনা তথা মুহাম্মদ (সঃ) এর রচনা তাহলে কোরআন তাকে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দিচ্ছে না। 

এ প্রসঙ্গে ‘সুরা বাকারা’র ২৩ ও ২৪ নম্বর আয়াত দু’টির প্রতি লক্ষ্য করুনঃ

“আর যদি তোমরা সন্দিহান হও, আমার খাছ বান্দার প্রতি অবতারিত কিতাবে, তাহলে তোমরা অনুরূপ একটি সূরা রচনা কর এবং ডেকে নাও তোমাদের সাহায্যকারীদের যারা খোদা হতে পৃথক; যদি তোমরা সত্যবাদী হও। অনন্তর যদি তোমরা তা করতে না পার এবং তোমরা কখনও তা করতে পারবে না, তবে তোমরা আত্মরক্ষা করিও দোযখ হতে যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে সত্য অস্বীকারকারীদের জন্য।” 

কোরআনের এ চ্যালেঞ্জ কোন স্থান কালের সীমানায় আবদ্ধ নয়। সর্ব যুগের  সকল মানুষকে লক্ষ্য করে এ চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ চৌদ্দশত বৎসর অতিক্রম করেছে। ইতোমধ্যে এ চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করে অনুরূপ সূরা রচনা করার চেষ্টাও করেছে অনেকে। কিন্তু তারা সামান্যটুকুও কৃতকার্য হয়নি। এ চ্যালেঞ্জ কোন ছেলেখেলা বা হাসিঠাট্টার বিষয় নয়। এটি কোন মানুষের প্রতি মানুষের চ্যালেঞ্জ নয়। বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জের সাথে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বলা হচ্ছে--চেষ্টা কর নিজে কিংবা সবাই মিলে, যদি না পার তবে, প্রমাণিত হলো যে এটি কোন মানুষের কথা নয়, আল্লাহর বাণী। সুতরাং এর আদেশ গুলি মেনে চল এবং নিজেকে নির্ধারিত শাস্তি থেকে রক্ষা কর।  এটিই বুদ্ধিমানের কাজ, এটিই সফলতার পথ।                            

লেখক

মু. মেজবাহ উদ্দিন

সহকারি অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ,

সীতাকুণ্ড কলেজ, 

সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ