Ticker

6/recent/ticker-posts

পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার ১০ টি কার্যকরী কৌশল/ উপায়



পড়ালেখায়-মনোযোগী-হওয়ার-উপায়


পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার ১০ টি কার্যকরী কৌশল 

পড়ায় মন বসতে চায়না, পড়তে বসলেই ঘুম আসে, নয়তো মাথায় এসে ভিড় করে রাজ্যের চিন্তা। টেবিলে বসে থাকা হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কিন্তু পড়া আর ফুরোয় না! - এগুলো আজকাল জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সবাই হন্যে হয়ে উপায় খুঁজছে - লেখা পড়ায় মনোযোগী হওয়ার উপায়! 
পড়ালেখায় মন আসলে কারোই বসে না সহজে। কিন্তু কিছু কৌশল তো অবশ্যই আছে যাতে জোর করে মনকে পড়ার টেবিলে ধরে রাখা সম্ভব। না হয় পৃথিবীর তাবৎ জ্ঞানী গুণী মানুষ কি করে এত জ্ঞান আহরণ করেছেন? কী করে সফলরা সাফল্যের চূড়ায় আরোহণ করেছেন? কী সেই রহস্য যাতে তারা মনকে পড়ায় স্থির করতে পেরেছেন? 
আজ এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করবো- পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার উপায় কি? আসলে এটা তেমন কোন রহস্যের ব্যাপার নয়, সাংঘাতিক কঠিন কিছু ও না। কিছু সহজ কিন্তু বিজ্ঞানসম্মত কৌশল অনুসরণ করেই আপনি পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারবেন। শুধুমাত্র সকল অলসতা ঝেড়ে ফেলে দৈনন্দিন রুটিনে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। চলুন আর দেরি না করে জেনে নেই কি সেই উপায় গুলো যাতে আপনার মন আবার ফিরে আসবে পড়ার টেবিলে।

পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার কৌশল

আমি আমার নিজের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা ও পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি বিশ্লেষণ করে কিছু মনোযোগ দিয়ে পড়ার উপায় সামনে তুলে ধরছি। আপনারা সেগুলো অনুসরণ করে দেখতে পারেন। 

১. জীবনের লক্ষ্য স্থির করা

অধিকাংশ মানুষের লেখাপড়ায় মনোযোগ না বসার প্রধান কারণ হলো "আমি কেন পড়ছি?" এই প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর না থাকা। শুধু পড়ালেখা নয়, পৃথিবীর যেকোনো কাজই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছাড়া সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। পড়ালেখা করে আপনি কোথায় পৌঁছাতে চান সেই টার্গেট আপনার আগে থেকেই সুনির্দিষ্ট করতে হবে। আপনাকে বারবার নিজেকে মনে করাতে হবে, কেন আপনার পড়তেই হবে। 

আপনি যদি স্কুল বা কলেজের ছাত্র বা ছাত্রী হয়ে থাকেন, আর আপনার পড়তে বসার লক্ষ্য যদি হয়ে থাকে শুধুমাত্র পরের দিনের ক্লাসের পড়া টুকু শেষ করা, তাহলে আপনি কেবল ততটুকুই করতে পারবেন। আর যদি কোনভাবে পড়া দেওয়া থেকে বেঁচে যাওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে তো সেটাও শেষ করা মুশকিল। আসলে আপনাকে জীবনের একটি বড় লক্ষ্য স্থির করতে হবে। শুধুমাত্র পরীক্ষায় কোনভাবে পাশ করে যাওয়া টার্গেট হলে সেটা মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করার জন্য যথেষ্ট নয়।

২. পড়ার রুটিন তৈরি করুন

রুটিন শব্দটা শুনলেই মনে এক ধরনের একঘেয়ে ও বিরক্তি ভাব সৃষ্টি হয়। কিন্তু পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখতে রুটিন এর কোন বিকল্প নেই। প্রকৃতপক্ষে, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত সহ পৃথিবীর কোন কাজই রুটিন ছাড়া হয়না। 
অধিকাংশ শিক্ষার্থীই কয়দিন পর পরই রুটিন তৈরি করে! কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, দুই এক দিন মানার পর সেই রুটিন আর মানতে ইচ্ছে করে না! তাই শুধু "পড়তে হবে" এই তাগাদা থেকে কোনরকম একটা রুটিন করে ফেললেই হবে না। রুটিনটা হতে হবে বিজ্ঞানসম্মত ও কার্যকরী। আপনি একটি নির্দিষ্ট বিষয় একটানা সর্বোচ্চ কতক্ষণ পড়তে পারেন সেটা মাথায় রাখতে হবে। একদিনে শুধুমাত্র একটি বা দুটি কঠিন বিষয় রেখে সাথে একটি বা দুটি সহজ বিষয় রাখতে  পারেন। যদি আপনার দশ-বারোটি বিষয় থাকে পড়ার মতো তাহলে একদিনে সবগুলো ধরতে যাওয়া বোকামি। দেখা যাবে একটি বিষয়ে আপনার সবেমাত্র মন বসেছে তখনই অন্য বিষয় পড়ার সময় হয়ে গেছে। 

দিনের নিরিবিলি সময়ে কঠিন বিষয়গুলো পড়ুন। কিছুক্ষণ পড়ার পর বিরতি নিন, একটু হেঁটে বা ঘুরে আসুন। বিরতির সময় টাও রুটিনের অন্তর্ভুক্ত রাখুন। কারণ, এটাও পড়ালেখায় ভালো করার উপায় গুলির একটি। কিছুদিন পর একঘেয়ে লাগলে রুটিন আবার পরিবর্তন করুন। 

বহুব্রীহি-অনলাইন-কোর্স
বহুব্রীহি অনলাইন কোর্স

৩. টেবিলে বসে পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন

পড়াশোনা থেকে অন্য মনস্ক হয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো টেবিলে বসে না পড়া। পড়া হোক বা না হোক একটি নির্দিষ্ট সময় টেবিলে বসে থাকার অভ্যাস করা অত্যন্ত জরুরি। বিছানায় শুয়ে বসে অথবা বিক্ষিপ্তভাবে একটি বই নিয়ে চোখ বুলানো মনোযোগ ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। শুয়ে বসে পড়লে কিছুক্ষণ পরে ঘুম ঘুম ভাব আসাটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া এভাবে পড়লে মনে সিরিয়াস ভাবটাও আসেনা! 
পড়তে বসার পূর্বেই টেবিলকে সুন্দর করে গুছিয়ে নিন, পড়ার পরিবেশ তৈরি করুন। পড়ার জন্য বই-খাতা-কলম সহ যা যা প্রয়োজন সবকিছু হাতের কাছে রাখুন। যেন বার বার টেবিল ছেড়ে উঠতে না হয়। 

পরীক্ষার হলে ভুলে যাওয়ার সমস্যায় ভুগলে পড়তে পারেন: 

৪. টার্গেট বা মিশন সেট করে পড়া

আপনি একদিনে কোন বিষয়ের কত অধ্যায় শেষ করবেন তার একটা টার্গেট সেট করে নিন। একটা অধ্যায় সর্বোচ্চ কত সময়ের মধ্যে শেষ করবেন সেটাও ঠিক করুন। যেমন: "এই অধ্যায়টি আমি এক ঘন্টায় শেষ করব"। টার্গেট ঠিক করার পর তার ওপর অটল থাকুন এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। 

মোবাইলের গেমসগুলোতে যেমন এক লেভেল এরপর অন্য লেভেলে যেতে হয়, প্রতিটি লেভেল শেষ করার পর উৎসাহ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এভাবে দীর্ঘ সময় ধরে খেললেও বিরক্তি আসেনা। ঠিক তেমনি পড়ার ক্ষেত্রেও ছোট ছোট টার্গেট গুলিতে সফল হলে আপনার উদ্দীপনা ও মনোযোগ বেড়ে যাবে।


৫. পর্যাপ্ত ঘুমান

আপনার যদি ২৪ ঘন্টায় পর্যাপ্ত ঘুম না হয়, তাহলে পড়তে বসে ঝিমানো অবশ্যই স্বাভাবিক ব্যাপার। স্বাভাবিক অবস্থায় একজন মানুষের দৈনিক ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। আপনি যদি রাত জেগে টিভি দেখে, ফেসবুক কিংবা ইউটিউবে সময় নষ্ট করেন, তাহলে আপনার ঘুম ঠিকমতো (সাউন্ড স্লিপ) হবে না। এর ফলে আপনার ব্রেইন শান্ত হবে না, সারা দিন শরীরে একটা ম্যাজম্যাজ ভাব থাকবে, মন প্রফুল্ল থাকবে না। পড়াশোনা সহ সকল কাজকর্মই বিরক্ত লাগবে।

ব্রেইনকে শান্ত ও কর্মক্ষম রাখতে দিনের ঘুমের চেয়েও রাতের ঘুম অনেক বেশি প্রয়োজন। রাতে পর্যাপ্ত ঘুম ছাড়াও দিনে অতিরিক্ত পরিশ্রমের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন। এতে করে প্রফুল্ল চিত্তে পড়ার টেবিলে বসে মনোযোগ দিয়ে পড়া সম্ভব হবে।

৬. ভোরে বা সকালে পড়ুন 

মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করার সর্বোত্তম সময় হল সকাল। রাতে একটি ভাল ঘুম দেওয়ার পর সকাল সকাল পৃথিবী কর্মব্যস্ত হওয়ার আগেই বই খুলে বসুন। এ সময় ব্রেইনের কর্মক্ষমতা সবচেয়ে বেশি থাকে। তাছাড়া আশেপাশের নিরিবিলি পরিবেশ মনোযোগ ধরে রাখতে খুবই সহায়ক হয়। 

আপনি সারাদিন খাটাখাটনির পর দিনশেষে যখন পড়তে বসেন, তখন দেহ ও মন ক্লান্ত থাকে। সারাদিনের ঘটনাবলী মস্তিষ্কে চলমান থাকে। এ সময় আপনি যতটা মনোযোগ দিতে পারবেন তার চেয়ে ভোরে মনোযোগ দেওয়া অনেক সহজ। তাই সকালের সময়টাকে কাজে লাগান, দেখবেন দুই তিন ঘণ্টায় অনেক বেশি পরিমাণ পড়তে পারছেন।

আরো পড়ুন: 

৭. যখনই মনোযোগ বসে তখন পড়ুন

সাধারণত পড়ার জন্য সবচেয়ে ভালো সময় সকাল কিংবা গভীর রাত। তবে পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষের মন ও মনন ভিন্ন প্রকৃতির। আপনি যদি সকাল সকাল উঠে কিংবা গভীর রাতে পড়তে অপারগ হন, তাহলে দিনের যে সময়টাতে আপনার মনোযোগ বসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি সেই সময়টি পড়ার জন্য বেছে নিন। সেটা দিনের যে কোন সময় হতে পারে। 

কেবলমাত্র আপনার রুটিন করা সময়েই পড়তে বসতে হবে এমন কোন কথা নেই। হঠাৎ আপনার মনে হল-"এখন মুড ভালো, তাহলে একটু পড়ে নেই!" -ভেবেই পড়তে বসে যাবেন। 




৮. নিয়মিত খেলাধুলা ও ব্যায়াম করুন

শরীরকে সুস্থ ও সাবলীল রাখতে নিয়মিত খেলাধুলা কিংবা ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। পড়ায় মনোযোগ দিতে হলে মন অবশ্যই ভালো থাকতে হবে সাথে শরীর ও প্রফুল্ল থাকতে হবে। তাই প্রতিদিন অন্তত আধাঘন্টা কিংবা এক ঘন্টা সময় প্রকৃতির সান্নিধ্যে, খেলাধুলা করে অথবা ব্যায়াম এর পেছনে ব্যয় করুন। এটাকে সময় নষ্ট মনে করার কোন কারণ নেই। বরং এই ১ ঘন্টা শরীর ও মনকে চাঙ্গা করার পেছনে ব্যয় করলে তা আপনাকে সারাদিন সাপোর্ট দিবে দিবে।  সময় নষ্ট করা এড়াতে চাইলে বরং ডিভাইস ব্যবহার করা কমিয়ে দিন।

তাছাড়া বিকালের সময় টা পড়াশোনা না করাই ভালো। তাই এই সময়টা আপনি শরীরচর্চায় নিশ্চিন্তে ব্যয় করতে পারেন, যার বিনিময় সারাদিন মন ফ্রেশ থাকা সম্ভব।

আরো পড়ুনঃ 

৯. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন

একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস শুধুমাত্র আপনাকে সুস্থ রাখতে সক্ষম তা নয় বরং মনোযোগ বৃদ্ধি ও মানসিক শক্তি বিকাশের ক্ষেত্রে ও এর ভূমিকা রয়েছে। অতিমাত্রায় ফাস্টফুড, তেলচর্বি জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত প্রোটিন, চা কফি ইত্যাদি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে। তাই এগুলো সহনশীল মাত্রায় খাওয়ার চেষ্টা করুন। শাকসবজি, ফলমূল ও প্রোটিন ও ভিটামিন জাতীয় খাবার এবং পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে খান। এতে শরীর ও সুস্থ থাকবে, পড়ায় ও মনোযোগ বাড়বে।

পড়ার মাঝখানে বিরতি নিয়ে হালকা নাস্তা বা চা-কফি খেয়ে শরীর ও মনকে চাঙ্গা করে নিতে পারেন। হালকা মিষ্টি জাতীয় কোন খাবার ও খেতে পারেন ব্রেইনকে সতেজ করার জন্য। 

১০. মাল্টি টাস্কিং (একসাথে একাধিক কাজ করা) পরিহার করুন

মানুষ কখনই একসাথে একাধিক কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করতে পারেনা। কাজগুলো শেষ হবে ঠিকই, কিন্তু কোনোটাই ভালোভাবে হবে না। তাছাড়া পড়াশোনা কখনোই খুব সহজ কাজ নয়। তাই টিভি, মোবাইল কিংবা কম্পিউটার সামনে নিয়ে পড়তে বসলে আপনার মন পড়াতেই থাকবে- এমন আশা করা বোকামি।
পড়তে বসার আগে বাকি সব কাজ শেষ করে নিন। জরুরী প্রয়োজন না থাকলে মোবাইল দূরে সরিয়ে রাখুন। টিভি বন্ধ করে দিন। ছোটবেলায় একটি প্রবাদ শুনতাম : 
"পড়ার সময় পড়া, খেলার সময় খেলা!" আপনাকেও সেটাই অনুসরণ করতে হবে! কোন ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করতে হলে বা অন্য কোন কাজ থাকলে তা পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর করুন। তাহলে মনোযোগ দেওয়া যেমন সহজ হবে, তেমনি শেখা ও তাড়াতাড়ি হবে। 


সর্বশেষ

পড়ালেখায় মনোযোগ বৃদ্ধির উপায় হিসেবে অনেক কিছুই আলোচনা করলাম। কিন্তু একটা কথা না বললেই নয়, মনোযোগ আসলে সিরিয়াসনেস থেকেই আসে। তাই লেখাপড়া কে হেলাফেলার বস্তু না ভেবে গুরুত্ব দিন। জীবন তো একটাই - একে সিরিয়াসলি নিন। আপনার পড়াশুনার সাথে আপনার মা - বাবার সপ্ন জড়িত, আপনার নিজের ভবিষ্যৎ জড়িত। এগুলো ভেবে নিজেকে অনুপ্রাণিত করুন, মনে উৎসাহ তৈরি করুন। 

মনোযোগী হওয়ার উপায় হিসেবে পড়া শুরুর পূর্বে অবশ্যই আল্লাহ্ তাআলা কে স্মরণ করুন, আপনার জ্ঞান বৃদ্ধি করে দেওয়ার জন্য দুআ করুন। তারপর " বিসমিল্লাহ্" বলে পড়া শুরু করুন। ইনশাআল্লাহ্ মনোযোগ বসবে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ

  1. কোনো উপায় নেই। কেননা পরিবেশ সবসময় পদ্ধতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন হয় না। তাই একটাই শুধু পথ খোলা আছে।আর তা হলো ইচ্ছাশক্তির প্রাবল্য। যদি ইচ্ছাশক্তি না থাকে কোনো উপায় কাজে আসবে না। মোটকথা পাঁচ-দশটা উপায় যাই থাকুক না কেন ইচ্ছাশক্তি না থাকলে এগুলো কোনো কাজেই আসবে না। মানে ইচ্ছাশক্তি না থাকলে আপনা একাডেমিক জীবনে কোনো লাভ-লস্ নেই,পুরোটাই লস☠️।

    উত্তরমুছুন

Feel free to comment for any query!