Ticker

6/recent/ticker-posts

কঠিন পড়া সহজে মনে রাখার অভিনব উপায় - কীভাবে পড়লে মুখস্ত হবে সহজে?

পড়া মনে রাখার উপায়

ছাত্র-ছাত্রীদের সবচেয়ে অপছন্দের বিষয় কোনটি? "পড়ালেখা" - তাইতো? হ্যাঁ, এটি শুধু অপছন্দেরই না আতঙ্কেরও বিষয়। কিন্তু কেন সবাই পড়ালেখা কে মজার বিষয় না ভেবে আতঙ্ক মনে করে?

আমার যদি খুব ভুল না হয়, এর প্রধান দুটি কারণ হলো, তারা-

  • পড়ায় আনন্দ খুঁজে পায়না
  • পড়া মনে রাখতে পারে না

এমন কি কোন উপায় আছে যাতে খুব সহজে পড়া মুখস্থ কিংবা মনে রাখতে পারেন? 

অবশ্যই আছে। এই আর্টিকেলটিতে আপনি  খুঁজে পাবেন অভিনব ও বৈজ্ঞানিকভাবে পড়া মনে রাখার উপায়। এর পাশাপাশি আমার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু মজার কৌশলও শেয়ার করছি আপনাদের সাথে!  আশা করছি, মনে রাখার সহজ উপায়গুলি জেনে আপনারা কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। 

পড়া মনে রাখার বৈজ্ঞানিক উপায়


১. আগ্রহ নিয়ে পড়া

শুধু পড়ালেখার ক্ষেত্রেই নয় যেকোন কাজেরই লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রথম শর্ত হলো আগ্রহ নিয়ে করা। 

একটা বিষয় খেয়াল করেছেন? বাচ্চারা অথবা ছাত্র-ছাত্রীরা যখন কোন মুভি, কার্টুন বা খেলা দেখে, সহজেই তার ডায়ালগগুলা আয়ত্ত করে ফেলে। কিন্তু পড়ালেখার ক্ষেত্রে হয় তার উল্টো। বারবার পড়েও কোনোভাবেই তা আয়ত্তে আসেনা। এই পার্থক্যের মূল কারণ হলো আগ্রহ না দেখানো।

আপনি যদি পড়ালেখাকে আগ্রহের সাথে না নিয়ে আতঙ্কের বিষয় ভাবেন তাহলে আপনার মস্তিষ্ক তাকে কিভাবে বেঁধে রাখবে বলুন?

কিন্তু কিভাবে এই আগ্রহ তৈরি করবেন?

আপনার পড়ার উদ্দেশ্য খুঁজে বের করুন। 'এটা পড়লে কি লাভ হবে? কেন পড়ছি ? কেউ জানতে চাইলে ঠিকভাবে বলতে পারব তো?" - আগে এই বিষয়গুলো নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করুন। দেখবেন, আপনাআপনি আগ্রহ চলে আসবে । আর হ্যাঁ! পড়তে বসলে যেন রাজ্যের চিন্তা মাথায় না ঘুরে সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখবেন!


২. কনসেপ্ট ট্রি

পড়া মনে রাখার একটি বৈজ্ঞানিক উপায় হল কনসেপ্ট ট্রি এর ব্যবহার। কিভাবে করবেন?

আপনি যে বিষয় গুলো পড়ছেন তা ছোট ছোট খন্ডে ভাগ করে নিন। প্রতিটি বিষয়ের সারমর্ম বের করুন এবং খাতায় একটি গাছ এঁকে তার প্রতিটি পাতায় সারমর্ম গুলো লিখে রাখুন। তৈরি হয়ে গেল আপনার কনসেপ্ট ট্রি।

এভাবে পড়লে যেকোন বিষয়েরই একটি সারমর্ম   বা প্রতিচ্ছবি আপনার সামনে থাকবে গোছানো অবস্থায়।

একটা উদাহরণ দেই। ধরুন আপনি Tense পড়ছেন বা পড়াচ্ছেন। এক্ষেত্রে কিভাবে কনসেপ্ট ট্রি তৈরি করবেন? প্রতিটি রুলস এর স্ট্রাকচার গুলো আলাদা করে নিন এবং গাছে বারোটি পাতা একে বারোটি স্ট্রাকচার বসিয়ে দিন।

কি মনে হয়? সহজে মনে রাখার জন্য কি এটি কাজ করবে না?


৩. লিখে বা ছবি এঁকে পড়া

নিউরো সাইন্স এর মতে, কোন কিছু লিখা বা আঁকার সময় ব্রেইনের অধিকাংশ জায়গাই উদ্দীপিত থাকে এবং সহজেই একটি স্থায়ী চিত্র তৈরি করে ফেলে যা অনেকদিন মেমোরিতে থেকে যায়। আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকেও আশা করি এই বিষয়টি আপনি খেয়াল করেছেন আগেই। বইয়ের যে বিষয়টি ছবি দিয়ে বুঝানো হয়, তা খুব তাড়াতাড়ি আপনার মেমোরি ক্যাচ করতে পারে।আর আপনি যখন তা লিখেন এবং ছবি আঁকেন তখন আপনার ব্রেইনের জন্য কাজটি আরও সহজ হয়ে যায়।

পরীক্ষার সময় বইয়ের পাতা নয় , আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে অনুশীলনের সময়ের ওই ছবি বা লেখা গুলোই।

Bohubrihi Online Course
"বহুব্রীহি"তে পাচ্ছেন অবিশ্বাস্য ডিসকাউন্টে আইইএলটিএস ( IELTS) ও জিআরই (GRE) এর পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতিমূলক কোর্স ! 


৪. নিজে পড়ে অন্যকে শেখানো

অনেকেই এই কাজটি করতে চাননা, নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। অথচ আপনি অন্যকে শেখানোর মাধ্যমে নিজেই বেশি লাভবান হতে পারেন। কিভাবে?

আপনি যখন অন্যজনকে কোন কিছু বুঝাতে যান তখন নিজেরই আরেকবার রিভাইস হয়ে যায়। পড়ার মাঝে কোথায় গ্যাপ রয়ে গেছে , কোন বিষয়টা ভুলে যেতে পারেন তাও আপনি বুঝতে পারবেন অন্যকে বোঝানোর সময়। তাছাড়া আপনার মাথায় যখন এটা কাজ করবে যে-  আরেকজনকে আমার এটা বুঝাতে হবে, তখন আপনাআপনিই পড়ায় মনোযোগ চলে আসবে। 

নিজের দক্ষতাকে অন্যের কাছে কে-ই-বা ছোট করে দেখাতে চায় বলুন!


৫. লাইটার পেন ব্যবহার

বইয়ের মধ্যে অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু বিদঘুটে কিছু টপিক থাকে যেগুলো আমাদের চোখ স্বভাবতই এড়িয়ে যেতে চায়। কালার পেন অথবা মার্কার দিয়ে এগুলোকে দাগিয়ে রাখলে তার উপর আগ্রহ ও আকর্ষণ বেড়ে যাবে। ব্রেইনের ভিজুয়াল ইফেক্টও বাড়িয়ে দেয় এটি, যার ফলে সহজেই আপনি পড়া মনে রাখতে পারেন। অথবা ভিন্ন ভিন্ন কালারের পেন দিয়ে খাতায় বিভিন্ন সূত্র ও তথ্য লিখে রাখতে পারেন। ভূগোল পড়ার ক্ষেত্রে কোনো মানচিত্রের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন কালার দিয়ে চিহ্নিত করে রাখতে পারেন।

এই পদ্ধতিগুলো আপনার মনে রাখার ক্ষমতাকে আরো বাড়িয়ে দিবে।


আরো দেখুনঃ


৬. রিভাইস

মানুষের মস্তিষ্কের একটা বড় লিমিটেশন হলো ভুলে যাওয়া। আজ আপনি যা পড়ছেন বা জানছেন ৫ দিন পর তার পাঁচ ভাগের তিন ভাগই ভুলে যাবেন। এটি গবেষণায় প্রমাণিত। তাই আপনাকে যা করতে হবে তা হল - বারবার রিভাইস দেয়া। 

প্রতি ৪৫ মিনিট পরপর ব্রেক নিয়ে এতক্ষণ কি পড়লেন তার রিভাইস করুন। ঘুমানোর আগে কিংবা নতুন টপিক শুরু করার পূর্বে, আগের পড়াগুলো মনে আছে কিনা একবার দেখে নেওয়ার চেষ্টা করুন।


৭. পর্যাপ্ত ঘুম

এটি পড়ায় মনোযোগী হওয়ার ক্ষেত্রে যেমন প্রয়োজন তেমনি পড়া মনে রাখার জন্যও। আমাদের ব্রেইন মূলত স্মৃতি তৈরীর কাজ করে ঘুমের ভিতর। তাই আপনার সারাদিনের অর্জিত জ্ঞানগুলো কে মেমোরি তে পরিণত করতে ঘুমানোর খুবই প্রয়োজন।

তাছাড়া পর্যাপ্ত না ঘুমালে সারাদিনের কাজের বেশি পরিমাণ লোড আপনার ব্রেইন এর উপর পড়ে ,কিছু তথ্য তখন আপনাআপনিই ডিলিট হয়ে যায় । 

তাই আপনার পরিশ্রমের উপযুক্ত আউটপুট পেতে হলে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোর অভ্যাস করুন।


আরো পড়ুনঃ 


আসুন এবার জেনে নিই পড়া মনে রাখার কিছু মজার কৌশল


৮. বেনীআসহকলা

বুঝতেই তো পারছেন আমি কি বুঝাতে চাইছি? হ্যাঁ, ছোটবেলা থেকেই আমরা কমবেশি এই শব্দের সাথে পরিচিত। রংধনুর সাতটি রং ধারাবাহিকভাবে শেখার ক্ষেত্রে এর চেয়ে সহজ পদ্ধতি কি আর কিছু হতে পারে?

পড়া মনে রাখার এই কৌশলকে বলা হয় "নিমনিক" ( Mnemonic)। যেকোনো বিষয় মুখস্থ করা অথবা মনে রাখার জন্য আপনি সহজেই একটু মাথা খাটিয়ে বের করে নিতে পারেন এমন নিমনিক কৌশলগুলো।

এই ধরুন, কোনো বড় বানান কিংবা সংখ্যা মনে রাখার ক্ষেত্রে আপনি তাকে ছোট ছোট খন্ডে ভাগ করে নিলেন। অথবা তার কোন মজার অর্থ বের করে নিলেন। কেমন অর্থ?

যেমন ধরুন - lieutenant (লেফটেন্যান্ট)। একে ভাগ করে নিন এভাবে -  lie-u-ten-ant , যার অর্থ দাঁড়ায় "মিথ্যা-তুমি-দশ-পিপিলিকা" ! বিষয়টি খুবই মজার এবং মনে রাখার জন্য অভিনব কৌশল, তাই না?


৯. ছন্দ করে পড়া 

ছোটবেলায় যে ছড়াগুলো মায়ের মুখে শিখেছিলেন তা কি এখনো ভুলতে পেরেছেন? না, চাইলেও সহজে ব্রেন থেকে তা আউট করা যায় না , কি আজব! আর এর পেছনে একটি বড় ভূমিকা পালন করে ছড়াগুলোর ছন্দ।

আমাদের মস্তিষ্ক খুবই ছন্দপ্রেমী। কোরআনের সুরাগুলোগুলোও আমরা সহজেই মুখস্ত করতে পারি এই কারণেই। এই ছন্দকে কাজে লাগাতে পারেন আপনার পড়া মনে রাখার উপায় হিসেবে। ব্যাপারটা একটু কঠিন কিন্তু একবার কাজে লাগাতে পারলে সহজে ভুলবার নয়।

একটা উদাহরণ দিই তাহলে। ধরুন, আপনি "ভয়েস চেঞ্জিং" পড়ছেন বা পড়াচ্ছেন। রুলস গুলো কি জটিল লাগছে ? আসুন দেখি, একে যদি আমরা ছন্দ বানিয়ে ফেলি তাহলে কেমন হবে!

"Subject মশাই Object হয়ে 
By এর পরে বসে,
Object ব্যাটা সামনে এসে
হি-হি করে হাসে ।
Verb এর past participle হয়-
Tense কে দেখে Auxi চেনে নিজের পরিচয়।"

মজার না? হ্যাঁ, ছোটবেলায় এভাবেই গ্রামার এর রুলস গুলো শিখতাম; যা কখনো ভুলিনি।


১০. গল্প বানিয়ে পড়া

নাটক, সিনেমা বা গল্প এগুলোর কাহিনী তো সহজে ভুলেন না , তাহলে পড়ালেখাকে ভুলতে দিবেন কেন? সিনেমার কনসেপ্ট তাই আপনার পড়ার মধ্যে ঢুকিয়ে দিন। 

কিভাবে?

এই ধরুন আপনি কারো জীবন নিয়ে পড়ছেন বা ইতিহাস পড়ছেন যাতে অনেক চরিত্র ও সাল রয়েছে মুখস্ত করার মতো। পুরো কনসেপ্টটা কে একটি সিনেমার কাহিনী বানিয়ে ফেলুন। হিরো ভিলেন মজার চরিত্র খুজে বের করুন আর নাম মনে না থাকলে নিজের মতো ডাক নাম দিয়ে দিন! যেভাবেই হোক, আপনার মস্তিষ্ককে বুঝতে দিন আপনি কোন মজার বিষয় পড়ছেন। আশা করি এভাবে পড়লে আর কোন বিষয়ই বোরিং লাগবে না।

বিজ্ঞানের বিষয় গুলোকে কিভাবে কাহিনী বানাবেন - এটাই ভাবছেন তো?

আমি তো এভাবেই পড়তাম, যেমন ধরুন - "জবা, রুই মাছ বা সরল দোলক কা কাহানী" যেখানে প্রতিটি  অংশই হতো এক একটি চরিত্র! 

হ্যাঁ, ব্যপারগুলো হাস্যকর। তবুও দিন শেষে পড়াতো মনে থাকতো!


শেষকথা

গদ বেঁধে মুখস্ত না করে সময়টা না হয় এমন মজার কৌশল বের করার ক্ষেত্রেই দিন! উপায়  বের করতে না পারলেও আপনার চেষ্টা ব্যর্থ হবে না। একটি বিষয়ে এভাবে গবেষণা করছেন দেখে আপনার মস্তিষ্ক এমনিতেই তা মনে রাখবে। আর কৌশল বের করতে পারলে তো কথাই নেই!

অবশেষে বলব, কোন কিছুতেই হতাশ হতে নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদের যতটুকু ক্ষমতা দিয়েছেন তার বাইরে আমরা কিছুই করতে পারবোনা । আর হ্যাঁ, পড়া মনে রাখার দোয়া টা সবসময় পড়বেন।

 "রাব্বি জিদনি ইলমা"

- "হে আমার রব, আমাকে জ্ঞান দিন"

 এভাবে চাইলে আপনার রবই একটি উপায় খুঁজে বের করে দিবেন ইন শা আল্লাহ। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ