Ticker

6/recent/ticker-posts

দাম্পত্য কলহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ কেন হয়? - মূল কারণ সমূহ



বর্তমান সময়ের সম্পর্কগুলো খুবই নাজুক ৷ সুখী পরিবার তো ডুমুরের ফুল বলা যায়৷ ডিভোর্স কিংবা বিবাহ বিচ্ছেদের হার ও অনেক বেড়েছে । সর্বোপরি সম্পর্ক গুলোতে ফাটল ধরার এবং সংসারে সুখ শান্তি নষ্ট হওয়ার মূল কারণ অনুসন্ধান এবং এগুলো সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা খোঁজার চেষ্টা করলে ঘুরেফিরে কিছু কমন কারণ পাওয়া যায়।এরকম সাতটি দাম্পত্য কলহের কারণ, আমরা এখানে উল্লেখ করছি যেগুলো পরবর্তীতে ডিভোর্সের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আপনি নিজের সাথে মিলিয়ে দেখতে পারেন, এগুলোর কোনোটি আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কিনা। যদি নাও হয়, তবুও ভবিষ্যতে সাবধান হওয়ার জন্য জেনে নিতে পারেন! চলুন জেনে নেই বিবাহ বিচ্ছেদ কেন হয় অথবা  সংসারে ভাঙনের কারণ কি?

১) স্বার্থপরতা :

স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াঝাটির প্রধান কারণ হিসেবে আমি দায়ী করব স্বার্থপরতা কিংবা "আমিত্ব" কে। যখন সংসার থেকে আমি কি পাচ্ছি - এই চিন্তাটাই মুখ্য হয়ে উঠে, সেই সংসারে অশান্তি আসবেই। সারাক্ষণ শুধু নিজের লাভ লোকসান হিসাব করতেই চলে যায়, সংসারের ভাল চিন্তা করার ফুরসৎ পায়না একজন স্বার্থপর ব্যাক্তি। অথচ হাদীসে এসেছে:

"ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমার নিজের জন্য যা পছন্দ কর তা তোমার ভাইয়ের জন্যও পছন্দ কর ৷ " [বুখারি]

২) ধৈর্যের অভাব :

বর্তমানে শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়েই নয় বরং সামগ্রিক ভাবে পুরো সমাজেই অস্থিরতা বেড়েছে। আমাদের মা - বাবারা যে পরিমাণ ধৈর্যের সাথে সংসার করে গেছেন, অনেক প্রতিকূলতা সত্বেও সংসারের হাল ছেড়ে দেননি, আমাদের মাঝে তার ছিটেফোঁটাও নেই। খারাপ পরিস্থিতির পর যে আবার ভাল দিন আসতে পারে সে পর্যন্ত ধৈর্য ধরার মানসিকতা নেই আমাদের। অথচ আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন বলেছেন:

"বলুন, হে আমার বিশ্বাসী বান্দাগণ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো। যারা এ দুনিয়াতে সৎকাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে পুণ্য। আল্লাহর পৃথিবী প্রশস্ত। যারা ধৈর্যশীল, তারাই তাদের পুরস্কার পায় অগণিত" (সূরা জুমার-১০)।

" মন্দের প্রতিফল অনূরূপ মন্দ, এবং যে ক্ষমা করে দেয় ও আপোস নিষ্পত্তি করে তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট আছে। " [সূরা শুরা :৪০]

৩) অহংকার:

বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে শিক্ষা দীক্ষায় , যোগ্যতায় কেউ কারো চেয়ে কম নয়। কিন্তু সমস্যা হল - যোগ্যতা মানুষকে বিনয়ী না করে অহংকারী করে তুলছে। সবাই নিজেকে অনেক বড় ভাবে, নিজেই সব সময় সঠিক- এমন জেদ ধরে থাকে। কেউ ই আগে ঝুঁকার পক্ষপাতী না, আগে " সরি " বলতে গেলে সবার ইগো সামনে এসে যায়। অথচ নমনীয় হওয়া মানে দুর্বলতা নয় - এটা বুঝতে হবে। একটু নমনীয় হলে অনেক বড় বড় ঝগড়া সহজেই মিটানো সম্ভব।

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, ‘ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার অন্তরে কণা পরিমাণ অহংকার রয়েছে।' ( সহীহ মুসলিম)

৪) ক্রোধ বা রাগ:

শুধু স্বামী স্ত্রী নয়, যে কোন ধরনের কলহের পিছনে রাগ একটা অন্যতম হাতিয়ার। রাগান্বিত অবস্থায় মানুষের কোন কাণ্ডজ্ঞান থাকে না, সে যা খুশি তাই করে, যা মুখে আসে তাই বলে। কিন্তু মুখ থেকে বের হওয়া তিক্ত কথা ফেরত নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাই নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারা দাম্পত্য জীবনে সুখী হওয়ার অন্যতম উপায়। নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জীবনে আমরা দেখি:

এক ব্যক্তি নবীজি (সা.)-কে বললেন, ‘আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেন, “তুমি রাগ করো না”। ওই ব্যক্তি কয়েকবার তা বললেন। নবীজি (সা.) প্রতিবারই বললেন, “রাগ করো না”।’
(বুখারি, খণ্ড: ৮, অধ্যায়: ৭৩, হাদিস: ১৩৭)

হযরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন: যখন তোমাদের কারো ক্রোধ আসে তখন সে যদি দাঁড়ানো থাকে তবে যেন বসে যায়, এতে যদি রাগ চলে যায় ভালো, অন্যথায় সে যেন শুয়ে পড়ে৷ (তিরমিযী)

আরো পড়তে পারেন: 

৫) মিথ্যা অনুমান ও সন্দেহ :

সুখী বৈবাহিক জীবনের মূলমন্ত্র হল সঙ্গীর উপর অগাধ বিশ্বাস। যাকে বিশ্বাস করা যায় না, তার সাথে সারা জীবন পার করা কঠিন। অযথা নানা রকম অনুমান ও সন্দেহ করতেই থাকলে, দুজনের মধ্যে দুরত্ব বাড়তেই থাকবে। তাই ভিত্তিহীন সন্দেহ করা থেকে বিরত থাকুন।

মহান আল্লাহ বলেন, 'যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হইয়ো না। '(সূরা বনী ইসরাইল: আয়াত ৩৬)

৬) সম্মান, শ্রদ্ধা ও স্নেহবোধের অভাব:

জীবনসঙ্গীকে শুধু ভালোবাসাই যথেষ্ঠ নয়, সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ ও প্রয়োজন। সে কতটা সম্মানের যোগ্য তা দেখার প্রয়োজন নেই, সে আপনার জীবনসঙ্গী- এতটুকু কারণই যথেষ্ঠ সম্মান পাওয়ার জন্য। তাকে গুরুত্ব দিতে শিখুন, তার খেয়াল রাখার চেষ্টা করুন। কোন কিছু নিয়ে তাকে হেয় করবেন না, অপমান করবেন না। তার সম্মান আপনার সম্মান একথা খেয়াল রাখুন। তার ছোট ছোট চাহিদা বা আবদার গুলি স্নেহশীল ভাবে পূরণ করার চেষ্টা করুন।

“যারা বড়দের সম্মান করে না এবং ছোটদের স্নেহ করে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।”(আবু দাউদ, হাদিস: ৪৮৪২)

আরো পড়ুন: 

Why Old Home? - Rights and Responsibilities of Parents


৭) ক্ষমাশীলতা অভাব :

দাম্পত্য কলহের পেছনে এই কারণটি ও অনেক বেশি ইন্ধন দেয়। আপনি যদি আপনার সঙ্গীর কোন ভুল ক্ষমা করতে না পারেন, সারাক্ষণ দোষ ধরতেই থাকেন তাহলে তার কাছ থেকেও অনুরূপ ই পাবেন। প্রত্যেক মানুষই ভুল করে, আপনি আমি কেউ ভুলের উর্ধ্বে নই। আজ আপনি তার ভুল ক্ষমা করলে কাল সে আপনাকে ক্ষমা করবে। অন্যথায় অভিযোগ জমতে জমতে পাহাড়সম হবে, সম্পর্কে ফাটল ধরবে। আল্লাহ্ নিজে ক্ষমাশীল এবং তিনি ক্ষমাশীল দের পছন্দ করেন। অতএব ক্ষমা করুন এবং আল্লাহর প্রিয় হয়ে যান!

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর মন্দের প্রতিফল মন্দ। অতঃপর যে ক্ষমা করে দেয় এবং আপস নিষ্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না। ’ (সুরা শুরা, আয়াত: ৪০)
__________________________

অতএব যে ব্যক্তির অন্তরে ইসলাম অনুপ্রবেশ করেছে / করছে , আল্লাহর ভয়ে যার হৃদয় প্রকম্পিত হয়, এই দোষগুলো তার অন্তর থেকে ধীরে ধীরে বিদায় নিতে বাধ্য ৷ তাহলে, মূলকথা কি দাঁড়াল ? ইসলামই সব সমস্যার একমাত্র সমাধান ৷ পরিবারের সবাই মিলে কুরআন হাদীসের অনুসরণে নেমে পড়লে ,ইন-শা-আল্লহ পরিবারগুলো হবে একেকটা জান্নাতের বাগান ৷ শুরুটা না হয় একজন থেকেই হল ...


--------------------------------------------------------------------

সহীহ-কোরআন-শিক্ষা
সহীহ কোরআন শিক্ষা

সহীহভাবে অর্থসহ কোরআন শিখতে টেন মিনিট স্কুল নিয়ে এসেছে '২৪ ঘন্টায় কোরআন শিখি' কোর্স। যে কোন বয়সের যে কেউ কোর্সটি করতে পারবেন!

🌟🌟ডিসকাউন্ট অফার পেতে : 🌟🌟 ১. প্রোমো কোড " QURAN200 " তে ২০০ টাকা ছাড়!!! (সময়সীমা: 30-06-2022) ২. প্রোমো কোড " MMQuran100 " তে ১০০ টাকা ছাড়!!! (সময়সীমা: 31-07-2022) ৩. প্রোমো কোড "QS100" তে ১০০ টাকা ছাড় !!! (সময়সীমা: 30-06-2022)



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

Feel free to comment for any query!