Ticker

6/recent/ticker-posts

Why Old Home? - Rights and Responsibilities of Parents



প্রথমেই আমাদের লাইফটাকে একটু রিভিউ করি... যদিও এটা সবারই পরিচিত চিত্র::

বাচ্চার বয়স ১-৩:
এ সময়েই বড়রা তার Aim in Life (জীবনের লক্ষ্য) নির্ধারণ করে ফেলেন- এই যেমন: আমার
ছেলে তো ইঞ্জিনিয়ার হবে কিংবা মেয়ে ডাক্তার
হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনকি লক্ষ্য করলে দেখবেন, বড় হয়ে কি হবে সে প্রশ্নের উত্তর কথা ফুটতেই বাচ্চাকে শেখানো হয়!

বাচ্চার বয়স ৪-৫:
"আব্বু! এই খাবারটা শেষ কর,না হয় বড় হয়ে ডাক্তার কি করে হবে!!"- এভাবেই Aim টা ক্রমাগত তার মাথায় গেঁথে দেওয়া হয়।

প্রাইমারি স্কুল লাইফ:
"আব্বু, তোমাকে তো ক্লাসে ফার্স্ট হতে হবে, অনেক পড়াশুনা করতে হবে, বৃত্তি পেতে হবে, আর আম্মুর কথা না শুনলে তো পরীক্ষায় ভাল
করতে পারবেনা ইত্যাদি...

হাই স্কুল লাইফ:
এ বয়সে এসে ছেলেমেয়েরা "Aim in life" রচনার সাথে পরিচিত হয় আর নিজের Aim
নিয়ে ভাবতে শুরু করে, এবং এস এস সি পরীক্ষা পর্যন্ত মোটামুটি বেশিরভাগই Aim in life হিসেবে কিছু স্থির করে এবং তা নিয়ে সপ্ন দেখা শুরু। ইন্টামিডিয়েট পর্যায়ও চলে এরই
ধারাবাহিকতায়....

এরপর:
এস. এস. সি. ও এইচ. এস. সি. তে এ প্লাস পাওয়ার জন্য সন্তানের অক্লান্ত পরিশ্রম৷ আর
মা-বাবার হাড়ভাঙা খাটুনি সন্তানকে সবার সেরা খাবার, সেরা পোশাক, সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা নিশ্চিত করা, সর্বোপরি সমাজে তাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ৷ প্রত্যেক মা বাবা এটাই সপ্ন দেখেন যে তাদের সন্তান সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে ঐশ্বর্যের মধ্যে থাকুক,তাই তাদের এত চেষ্টা....


অবশেষে একসময় সন্তান নিজের ও মা-বাবার সপ্ন পূরণ করে, "Aim in life " হাসিল করে ৷ এরপর বিয়ে করে, সংসার শুরু করে, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যেই থাকে ... কিন্তু তারপর????

তার পর তার সপ্ন বদলে যায়, সে সপ্ন দেখতে শুরু করে নিজের সন্তানকে নিয়ে, তার জন্যই
দিনরাত পরিশ্রম করে আর ভাবে : "আমার নিজের এবং মা-বাবার সপ্ন পূরণ তো শেষ, তারাই তো শিখিয়েছেন- জীবনে একটু ভাল থাকাই সব, এখন তো আমি ভালই আছি,আরো ভাল থাকব যদি তাদের ভরণ-পোষণ এর
ঝামেলা না থাকত!! হ্যাঁ ঝামেলাই তো, আমার সপ্ন তো আমার ছেলেমেয়েকে সুখে রাখা,তাহলে মা-বাবাকে আর কেন প্রয়োজন? তাদের ইচ্ছা তো পূরণ হয়েছে, এখানে থাকলে বরং আমার
ছেলেমেয়েদের কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। তাছাড়া,
আমার সন্তানের জন্য এতটুকু তো আমি করতেই
পারি, তারা হলেও তো এটাই করতেন!" যেমন ভাবা তেমন কাজ,পাঠিয়ে দেয় বৃদ্ধাশ্রমে.....

তখন মা - বাবা বৃদ্ধাশ্রমে বসে কাঁদেন আর ভাবেন "আমি তার জন্য কি না করেছি, তবু কেন সে এটা করল, আমাকে কি তার কোন প্রয়োজন নেই,"কেন এমন করল, আমার "কী" দোষ????"

হ্যাঁ, এই "কী" ও "কেন"র উত্তর খুঁজতে গিয়েই এই লেখা....

দোষ কার? আমিই তাকে শিখিয়েছি,"Aim in life" হল প্রতিষ্ঠিত হওয়া, এটাই সবকিছু এবং এর জন্য কি কি প্রয়োজন, সে তা হাসিল করেছে, আমি তাকে সাহায্য করেছি, এরপর তো আসলেই আমার আর প্রয়োজন নেই, কেননা আমি তো তাকে তাকে শিখাইনি যে "Aim of life" হল আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং জান্নাত যার
একটা পিতার সন্তুষ্টিতে অন্যটা মায়ের পায়ের
নিচে...
আমি তাকে শিখাইনি সূরা বনী ইসরাইলের সে আয়াত:
".....তোমরা পিতামাতার সাথে ভাল ব্যবহার
করবে৷ তোমাদের কাছে যদি তাদের একজন
অথবা উভয়েই বৃদ্ধ অবস্থায় পৌঁছে তবে তাদেরকে 'উহ্' পর্যন্ত বলবেনা৷ তাদেরকে ভর্ৎসনা করবেনা এবং তাদের সাথে মর্যাদা সহকারে কথা বলবে ৷"

সে যখন শিখেছে: "Without an aim a man can not become successful", আমি কি তাকে বলেছি যে - আসল সফলতা তো জান্নাত
প্রাপ্তি ছাড়া আর কিছুই নয় আর :
মহানবী (সা:) বলেছেন,
যে ব্যক্তি বৃদ্ধাবস্থায় পিতামাতা দুজনকেই পেল অথচ জান্নাতে যেতে পারলনা,তার চেয়ে হতভাগা আর কেউ নেই..."

আমি তার হাতে সেই বই তুলে দিয়েছি যা তাকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানিয়েছে, যা তাকে মানুষ না বানিয়ে বানিয়েছে যন্ত্র৷ ছোটবেলায় দিয়েছি রাজা-রাণীর কাহিনী যা পড়ে সে রাজার মত জীবন ধারণের সপ্ন দেখেছে, সেই বই তো দেইনি যাতে এ কথা লিখা ছিল যে:
"আল্লাহর পর কার হক আদায় করতে হবে"
এ প্রশ্নের উত্তরে মহানবী(সা:) ৩ বার মায়ের নাম এবং তারপর বাবার নাম বলেছিলেন৷ [১]

এ হাদীস পড়লে তো সে জানতো যে তার নিজের সন্তানের সুখের পিছনে ছোটার আগে তাকে তার মা-বাবার হক আদায় করতে হবে৷ সন্তানের হক এবং মা বাবার হক স্বস্থানে সমান গুরত্বপূর্ণ।

তাকে যদি আমি এ ঘটনা বলতাম,
"যখন এক ব্যক্তি এসে বলল,ইয়া রাসূলুল্লাহ,
আমার পিতা আমার সম্পদ উপভোগের মুখাপেক্ষী, তিনি বললেন, তুমি ও তোমার সম্পদ উভয়ই তোমার পিতার। " (তাফসীরে কুরতুবী ৬ : ২৪)

তাহলে কি সে কখনো একথা ভবতে পারত যে মা বাবা তার উপর বোঝা? কখনোই পারতনা, বরং সে তো মা বাবাকে দুনিয়া ও আখিরাতের অমূল্য সম্পদ হিসেবে মাথায় করে রাখতো.....
তাহলে কি দাঁড়াল, দোষটা কার? শুধুই সন্তানের?

আপনি বলবেন "আমি তো আমার সন্তানের
ভালই চেয়েছি, এটা কি দোষ?" না, এটা দোষ নয়, দোষ হল শুধু দুনিয়ার ভালচেয়েছেন, যেখানে সে কয়েকটা বছর থাকবে মাত্র, অথচ
যেখানে আপনার সন্তান চিরকাল থাকবে, সেই
আখিরাতে সে ভাল থাকুক এটা চাইতে ভুলে গেছেন, তাই তাকে আল্লাহ, রাসূল(সা:) আর
কুরআনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেননি, তার দেহের হক আদায় করেছেন ঠিকই, কিন্তু আত্মার হক আদায় করতে ভুলে গেছেন ...

তাই রিটার্ন হিসেবেই হয়তো আপনি আজ এই বৃদ্ধাশ্রমে.....
আফটার অল - জীবন তো আয়না ...

________________________

রেফারেন্স:

[১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক লোক রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল: হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার নিকট কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার অধিক হকদার? তিনি বললেনঃতোমার মা। লোকটি বললোঃ অতঃপর কে? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃতোমার মা। সে বললোঃ অতঃপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বললোঃ অতঃপর কে? তিনি বললেনঃঅতঃপর তোমার বাবা।


-সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৯৭১
(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫৩৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪৩৩)
[মুসলিম ৪৫/১, হাঃ ২৫৪৮]

পিতামাতার সেবা সম্পর্কিত আরো কিছু হাদীস:

⭐আবদুল্লাহ্‌ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ্‌ ইবনু ‘আম্‌র (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ কবীরা গুনাহ্‌সমূহের (অন্যতম) হচ্ছে আল্লাহ্‌র সঙ্গে শরীক করা, পিতামাতার নাফারমানী করা, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম করা।

- সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৬৭৫
(আধুনিক প্রকাশনী- ৬২০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২১৯)


⭐‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যাক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে জিহাদে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করল। তখন তিনি বললেন, তোমার পিতামাতা জীবিত আছেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তবে তাঁদের খিদমাতের চেষ্টা কর।’
- সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩০০৪



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

Feel free to comment for any query!