Ticker

6/recent/ticker-posts

Bangla Story - একজন বাবার ডায়েরী

আজ আমার সবচেয়ে খুশির দিন! আজকে আমাকে আল্লাহ তাঁর সবচেয়ে বড় নিয়ামত দিয়েছেন ৷ হ্যাঁ, কন্যাসন্তানের কথাই বলছি! আমি তো এরই আকাঙ্ক্ষী ছিলাম ! কারণ, এযে আল্লাহর রহমত ৷ অনেক বছর আগে থেকেই একটা নাম ঠিক করে রেখেছিলাম, মনে মনে ৷ কাউকে বলিনি কখনো ৷ যদি কখনো আল্লাহ কন্যাসন্তান দেন তবে এই নামটাই রাখার খুব ইচ্ছা ছিল ৷ সে ইচ্ছা পূরণ হতে চলেছে খুব শীঘ্রই! আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! 
... ... ... ... ... ... ...

আমার মেয়েটার বয়স এখন চার ৷এত পাকা পাকা কথা বলে! আর যা জেদ ৷ একদম আমার মত! আমি তো আমার বাবার কাছে জেদ করার সুযোগ পাইনি, তার আগেই তিনি চলে গেছেন ৷ তাই ওর সীমাহীন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আর সকল যৌক্তিক দাবীদাওয়া মেটানোই আমার প্রধান কাজে পরিণত হয়েছে ৷ তবে আমি আমার মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করতে চাই ৷ তাই অন্যায় আবদার কখনোই পূরণ করিনা ৷ ও হয়তো তখন খুব বেশি কান্না করে ৷ ওই সময়টা আমি ওর থেকে একটু দূরেই থাকি ৷ মেয়ের এই কষ্টের কান্না দেখার মতো সাহস আমার নেই ৷ কিন্তু ও ন্যায় অন্যায়ের পার্থক্য শিখুক - এই চাওয়াটাই মুখ্য ৷ আমার দুনিয়াই যেন ওকে ঘিরে ৷ সকাল বিকাল তাকে গল্প শোনাতে হয় ৷ প্রতিবার খাওয়ার সময় নতুন গল্প ৷ এক গল্প দুইবার বলা যাবেনা ! আমিও তাকে রাসূল (সাঃ) আর সাহাবীদের (রা:) গল্প শুনতেই অভ্যস্থ করছি ৷ সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখি ৷ একটু চোখের আড়াল হলেই মনে হয় - এই বুঝি আমার কলিজাটা কেউ বের করে নিতে চাইছে! মাঝেমাঝে বুঝতে পারি এত বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই ৷ কিন্তু তারপরও রাজ্যের যত দুশ্চিন্তা সব মাথায় এসে ভর করে ৷ হয়তো মেয়েটাকে বেশিই ভালবাসি বলে !
... ... ... ... ... ... ... ... 

মামনি এখন ক্লাস এইটে ৷ সামনে বৃত্তি পরীক্ষা ৷ এত মেন্টাল প্রেসারে থাকে ৷ সারাদিন পরিশ্রম করে এত ক্লান্ত থাকে, সন্ধ্যা হলে টেবিলেই ঘুম ৷ ঘুমের জন্য পড়তে পারেনা দেখে কান্নাকাটি করে শুধু ৷ আর ওর মা সারাক্ষণ স্বান্তনা দিতেই থাকে ৷ আমি অবশ্য ওকে বলেছি: " দুনিয়া নিয়ে এত টেনশন করার কি আছে ! তোমার সাধ্য যতটুকু তুমি ততটুকুই করবা ৷ তাতেই আমরা খুশি ৷ আগে নিজে সুস্থ্য থাক - এটাই বড় কথা ৷ ঘুম আসলে ঘুমাবা ৷ শরীরের উপর জুলুম করার প্রয়োজন নেই ৷ " কিন্তু সমস্যা হল আমিই তো এই কয়দিন একটুও ঘুমাতে পারছিনা ৷ খালি মনে হয় মেয়ে আমার পরীক্ষা একটু খারাপ হলে( আল্লাহ না করুন) মেনে নিতে পারবে তো ! তবে আমি যে ঘুমাতে পারছিনা এটা ওকে মোটেও বুঝতে দেওয়া যাবেনা ৷ শুরু করবে বকাবকি ৷ আমার স্বাস্থ্য চিন্তায় সেও তখন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়াশোনার আরো বারটা বাজাবে ! দেখতে দেখতে অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেছে ৷ সংখ্যার হিসাবে তেইশ , হ্যাঁ আমার মেয়ের এখন তেইশ বছর ৷ চারদিক থেকে বিয়ের সম্বন্ধ আসছে ৷ বাচ্চা মেয়েটা কখন এত বড় হয়ে গেল টেরই পেলাম না ! অবশ্য এটা সবার কথা ৷ বয়স গুনলে বিয়ের বয়স হয়েছে হয়তো, কিন্তু আসলে তো ও এখনো বাচ্চাই ! এখনো আমার কাছে চকলেট - আইসক্রিমের দাবীদাওয়া তার কমেনি , একটু শরীরে খারাপ লাগলেই মা খাইয়ে দিতে হয় ! কি করে সে পুরো একটা সংসার সামলাবে ? কাউকে একথা বলতে গেলেই বলে ' বিয়ে দিয়ে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে ৷ ' কোন অজুহাতই দাঁড় করাতে পারছিনা মেয়েটাকে আরো কটা বছর কাছে রাখার ৷ মনে হয় এবার তাকে বিদায় দিতেই হবে ৷ ভাবতেই কান্না পায় ৷ মেয়েটার মুখের দিকে তাকাতে পারিনা ৷ চোখ লাল হয়ে যায় ৷ ভাবি: 'কেন এত তাড়াতাড়ি বড় হতে গেলি মা? কোথায় পাব তোর জন্য সেই রাজপুত্র, যে তোকে আমার মত মাথায় করে রাখবে ! জানিনা ... তবে খুঁজে বের করবই ইন - শা - আল্লহ ৷ আর তাঁর কাছে তো সাহায্য চাইছি প্রতিনিয়ত ৷ ' 
... ... ... ... ... ... 

আজ এক সপ্তাহ হল ৷ মেয়েটাকে শ্বশুড়বাড়়ি রেখে এসেছি ৷ সাত দিন ৷ মনে হচেছ যেন সাত বছর ৷ বাকী সবাই আছে ৷ তারপরও মনে হয় যেন কেউ নেই ৷ কিছুক্ষণ পরপর এসে এটা সেটা নিয়ে বকাঝকা দেওয়ার , বায়না করার কিংবা অভিমান করার তো কেউ নেই ৷ আমি ভাবতে পারিনা, আমার মেয়ের দায়িত্ব আর আমার নেই ! অবশ্য একটা ব্যাপার ভেবে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারি যে ছেলেটা অনেক ভাল ৷ মানে, যার হাতে ওকে তুলে দিয়েছি ৷ অনেক খোঁজ খবর নিয়েছি ৷ মনে হয়েছে আমার কলজের টুকরোটাকে সে ভাল রাখতে পারবে ৷ বাকীটা তো আল্লাহর হাতে ৷ মেয়েটা আমার এত সমঝদার ৷ আমার পছন্দই নাকি তার পছন্দ ৷ তবে অনেক চাপাচাপিতে তার কিছু requirements জানিয়েছে মাকে ৷ সে অনুসারেই আমি পাত্র খুঁজে বের করেছি ৷ আর ও বলেছে আমি আর ওর মা খুশি হলেই ও খুশি ৷ হ্যাঁ, সত্যিই আমি খুশি ৷ মেয়েটার জন্মের পর থেকে আজ পর্যন্ত এতটা ভালবেসেছি, কিন্তু কিছু পাওয়ার আশা কখনো ছিলনা ৷ মেয়ের থেকে আর কিইবা পাওয়ার আশা করা যায় ৷ মেয়েটার খুব আফসোস ছিল আমাদের জন্য কিছু করতে পারবেনা বলে ৷ কিন্তু ও তো জানেনা , ওর থেকে যা পাওয়ার সেটা আমি পেয়ে গেছি ! জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্তে সে আমার ওপর বিশ্বাস করেছে ,ভরসা করেছে ৷ আমি ওর কাছে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ৷ সত্যিই তো , আর কি পাওয়ার আছে ? মন থেকেই দোয়া আসে ৷ ওর মায়েরও ৷ আর আল্লাহ তো মা বাবার দোয়া কবুল করেনই ৷ তাই সবসময় দোয়া করি: আমার মেয়েটাকে যেন আল্লাহ ভাল রাখেন ৷ অনেক ভাল ৷ দুনিয়া ও আখিরাতে ৷ " 

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... 

( লেখাটা কাল্পনিক ৷ গল্পের মতোই ৷ এটা একজন সাধারণ বাবার চিন্তার প্রতিচ্ছবি মাত্র ৷ সমাজের প্রতিটা বাবা এমন না হলেও অধিকাংশ এমনই ৷ অনেক বেশি ভালবাসেন তাদের মেয়েদেরকে ৷ সবসময় তাদের সিদ্ধান্ত হয়তো সঠিক হয়না ৷ কিন্তু ভালবাসায় ঘাটতি তাদের কখনোই থাকেনা ৷ গল্পের শেষটা অন্য রকম হতে পারত ৷ হতে পারত - মেয়েটা কারো হাত ধরে পালিয়ে গেছে ৷ কিন্তু তখন গল্পটা হয়তো অসমাপ্ত থেকে যেত ৷ কারণ এই বাবার চূর্ণ-বিচূর্ণ অন্তরের হাহাকার উপলব্ধি করার সাহস লেখিকার নেই ৷ তাই বলে ভাববেননা আমার চিন্তাটা এক তরফা ৷ মানুষের নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নিজের নেওয়ার অধিকার আছে ৷ যা বাবারা অনেকসময় বোঝেননা ৷ নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন ৷ এক্ষেত্রে সমাধান একমাত্র ইসলাম ই দিয়েছে ৷ ইসলাম অনুসারে কনের সম্মতি ছাড়া বিয়ে হয়না আবার অভিভাবকের সম্মতিও আবশ্যক ৷ উভয়পক্ষেরই এই ব্যাপারে সচেতন হওয়া দরকার ৷ তবে আরো কিছু ব্যাপার অবশ্যই চিন্তা করা উচিত ৷ প্রথমত: যে কোন হারাম মানুষকে অন্ধ করে দেয় ৷ একটা হারাম সম্পর্ক সবগুলো রূহানী সম্পর্ককে আচ্ছন্ন করে ফেলে ৷ অন্য সব সম্পর্ককে তখন ঠুনকো মনে হয় ৷ কারণ শয়তানের ফাঁদ অনেক শক্তিশালী ৷ দ্বিতীয়ত, পৃথিবীর সবকিছু পেলেও মা - বাবার দোয়া ছাড়া সন্তান সুখী থাকতে পারেনা ৷ আর মা বাবার কখনো বদদোয়া করেননা ঠিকই, তবে তাদের কষ্টের একটা দীর্ঘশ্বাসই সন্তানের জীবনকে আল্লাহর ক্রোধের শিকার করার জন্য যথেষ্ট হতে পারে ৷ অন্যদিকে জীবনে অনেক কিছু হারালেও কেবল মা বাবার অন্তর থেকে দোয়াই সন্তানকে সুখী করার জন্য যথেষ্ট ৷ )


লেখক: শারাবান ত্বাহুরা

আরো পড়ুন: 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ

Feel free to comment for any query!