লকডাউন কী?
‘লকডাউন’- শব্দটির শাব্দিক অর্থ 'তালাবদ্ধ করে দেয়া'।
ক্যামব্রিজ ডিকশনারিতে শব্দটির ব্যাখ্যা করা হয়েছে, "কোন জরুরি পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষকে কোন নির্দিষ্ট জায়গা থেকে বের হতে বাঁধা দেওয়া কিংবা ওই জায়গায় প্রবেশ করতে না দেওয়াই হলো লকডাউন।"
অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির ভাষ্যমতে: জরুরি সুরক্ষার প্রয়োজনে কোনো নিদিষ্ট এলাকায় জনসাধারণের প্রবেশ ও প্রস্থান নিয়ন্ত্রণ করাই ‘লকডাউন।’
লকডাউনে ঘরে বসে কি কি করতে পারেন?
নিচে এমন কিছু কাজের আইডিয়া দেওয়া হল যা শুধু লকডাউন নয় বরং যে কোন অবসর কিংবা লম্বা ছুটিতেই আপনি করতে পারবেন। এগুলোতে সময় ব্যয় করলে পরবর্তীতে আপনি অবশ্যই সুফল আশা করতে পারবেন। চলুন আর দেরি না করে জেনে নেই:
১) জ্ঞান অর্জন
মানুষ এ পৃথবীতে শুধু খেয়ে পরে বেঁচে থাকার জন্য আসেনি। জ্ঞানই মানুষকে পশু থেকে আলাদা করেছে। তাই জ্ঞান অর্জনের কোন বিকল্প নেই। আপনার যদি বই পড়ার অভ্যাস না থাকে তাহলে এই সময়ে অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। আর যদি আগে থেকেই অভ্যস্ত হন, তাহলে যে বইগুলো সময়ের অভাবে পড়তে পারছিলেনন না সেগুলো এখন শেষ করে ফেলুন। শুধু যে কেনা বই থেকেই জ্ঞান অর্জন করতে হবে সেটা তো না। এখন তো অনলাইনে অনেক শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট ও রয়েছে যা থেকে শিখতে পারেন অনেক কিছু।
২) ব্যায়াম ও শরীর চর্চা
এই মুহূর্তে এর গুরুত্ব বর্ণনাতীত। কেননা করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। বেশি বেশি পুষ্টিকর খাবার ও পানি খান, অস্বাস্থ্যকর খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন, শরীরকে আরো মজবুত করুন।
৩) পরিবারকে সময় দেওয়া
পরিবারকে সময় (কোয়ালিটি টাইম) দেওয়ার বোধহয় এর চেয়ে উপযুক্ত সময় আর নেই। সারা বছর নানান ব্যস্ততার কারণে পরিবারকে সময় দেওয়ার সুযোগ হয় না বললেই চলে। শুধুমাত্র সময় দিতে না পারার কারণে আপনজনের সাথে কত দূরত্ব তৈরি হয়ে যায় অনেক সময়। তাই অনর্থক কাজে সময় নষ্ট না করে পরিবারের সদস্যের সাথে ভাল সময় কাটান। অনেক দিন ধরে জমে যাওয়া না বলা কথা গুলো এক্ষুণি বলে ফেলুন। নিত্যনতুন আইডিয়া বের করে সবাই মিলে আনন্দের সাথে সেগুলো বাস্তবায়ন করুন।
৪) ঘরে বসে আয় করুন
লকডাউনের কারণে কিন্তু অনেকেরই আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের জন্য এখন অনলাইনে আয়ের মাধ্যম খুঁজে বের করা জরুরি। আর অন্যরাও কিছু এক্সট্রা ইনকাম করতেই পারেন এই সময় ঘরে বসে। অনেক অপশন আছে এখন ঘরে বসে অনলাইনে আয় করার। এই লকডাউনে অনকেই অনলাইন ব্যবসা শুরু করেছেন বিভিন্ন প্লাটফর্মে। ঘরে তৈরি খাবার থেকে শুরু করে, নানা জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। অনলাইনে ক্রেতার ও এখন অভাব নেই। অনলাইন ব্যবসা ছাড়াও আছে ফ্রিল্যান্সিং, ব্লগিং, ইউটিউবিং, অনলাইন টিউশন সহ আরো অনেক কিছু। আপনার সাধ্যের মধ্যে আছে এমন কাজ করে অনলাইনে আয় করার চেষ্টা করতে পারেন।
৫) নতুন রান্না শেখা
আপনি নারী অথবা পুরুষ যাই হন না কেন, নতুন রান্না অবশ্যই শিখতে পারেন! আগে থেকে রান্না জানলে এখন এক্সপার্ট হয়ে উঠুন, নতুন আইটেম বানান। আর যারা রান্নার ' র ' ও জানেন না তারা ভাত - ডাল- সবজির মত বেসিক আইটেম রান্না করে শিখে নিন, যেন কখনো একা থাকতে হলে বিপদে না পড়েন। বিশেষ করে এই লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, আইসলেশন এর সময় একা থাকতে হতেই পারে, তাই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার কোন বিকল্প নেই।
৬) নতুন কাজ শিখে দক্ষতা বাড়ান
শেখার কোন শেষ নেই। নিত্য নতুন কাজ শিখে এই প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেকে আরো যোগ্য করে তুলুন। অনলাইনে করতে পারেন বিভিন্ন ধরনের কোর্স - ইংরেজি, আরবী, জাপানি সহ নানা ভাষার কোর্স করে শিখতে পারেন নতুন ভাষা। বেসিক কম্পিউটার কোর্স, ফ্রী গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কোর্স, ফ্রীল্যান্সিং, ই - কমার্স কোর্স, উ- কমার্স কোর্স, এফিলিয়েট মার্কেটিং সহ আরো অনেক ফ্রী ও পেইড কোর্স আছে আপনার প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর জন্য। এছাড়া সাঁতার শেখা, সেলাই কাজ শেখা সহ যে কোন ধরনের কাজ নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী নির্বাচন করুন।
৭) ঘর সাজানো ও বাগান করা
কাজের ব্যস্ততা শেষে ঘরে ফিরে আসতেই হয়, কিন্তু সেই প্রশান্তির ঘরটিকে মনের মত করে সাজানোর সময় সুযোগ সবসময় হয়না। এখন সবার আগে ঘর ভালমত পরিষ্কার করে ভিতরের সেটআপ পরিবর্তন করতে পারেন, বাচ্চাদের রুমে নিজের হাতে ক্রাফট তৈরি করে সাজিয়ে দিতে পারেন। অবসরে কিছু শোপিস ও বানাতে পারেন। প্রিয় বারান্দা অথবা আঙিনায় লাগাতে পারেন পছন্দের ফুল গাছ। বাগানে কাজ করে শরীরের ফিটনেস ও ভাল থাকবে। টুকটাক শাক সবজি ও চাষ করতে পারেন, শোভাবর্ধন এর পাশাপাশি রান্না করে খেতেও পারবেন। বাড়ির আঙিনা সর্বদা পরিস্কার রাখুন।
৮) ধর্মচর্চা
আমরা অনেকেই ব্যস্ততার মধ্যে ধর্মীয় কাজ কর্ম থেকে অনেক দূরে চলে যাই। স্রষ্টার সান্নিধ্যে আসার এটা মহা সুযোগ। সেই কাজগুলো বুড়ো হলে করার জন্য ফেলে রেখেছেন, সেগুলি এখনই করে ফেলুন যতদূর সম্ভব। অন্তরের প্রশান্তির জন্য স্রষ্টার সাথে সুসম্পর্ক তৈরি করার কোন বিকল্প নেই। নিয়মিত নামাজ পড়ুন, কুরআন তিলাওয়াত করুন, অর্থ জানার চেষ্টা করুন। ইসলামিক বই পড়ুন। সহিহ কুরআন শিক্ষা, মাসআলা মাসায়েল, আকিদা সহ অনেক অনলাইন কোর্স আছে , সেগুলি করতে পারেন। নফল আমল করুনবেশি বেশি এবং মৃত্যুর প্রস্তুতি নিন।
৯) আত্মসমালচনা ও আত্ম - উন্নয়ন
এই ব্যাপারটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু অনেকেরই এ সম্পর্কে কোন ধারনাই নেই। নিজেকে সময় দিন, নিজের পিছনে সময় দিন। নিজের দোষ গুলি খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন (প্রয়োজনে কাছের মানুষদের সাহায্য নিন) এবং সেগুলি সংশোধনের পেছনে সময় ও শ্রম দিন।
ভাল থাকতে হলে পারিপার্শ্বিক অবস্থার চেয়ে নিজের চেষ্টাই বেশি প্রয়োজন। নিজেকে সংশোধন ও আরো উন্নত মননের ও চলনের অধিকারী করুন। তাহলে নিজেও ভাল থাকতে পারবেন, আশেপাশের মানুষদেরকে ও ভাল রাখতে পারবেন।
১০) সাহিত্য চর্চা কিংবা আঁকিবুকি
আপনার যদি লেখালেখির ঝোঁক থাকে, তাহলে খাতা কলম নিয়ে এক্ষুণি শুরু করে দিন। লিখতে থাকুন, ধীরে ধীরে আরো ভালো লিখতে পারবেন। আরো একধাপ এগিয়ে চাইলে নিজের একটি ব্লগ কিংবা ওয়েবসাইটও খুলে ফেলতে পারেন, লেখা সবার জন্য ছড়িয়ে দিতে। ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কোর্স করে নিজের ওয়েবসাইট নিজেই তৈরি করতে পারেন কিংবা ফেসবুকও পোস্ট করতে পারেন। আর যদি ছবি আঁকার শখ থাকলে সেটাও এখন চর্চা করতে পারেন। তুলির আঁচড়ে মন ভালো হয়ে যেতে পারে, ভুলে যেতে পারেন দুঃখ গুলো!
3 মন্তব্যসমূহ
👍👍👍👍👍
উত্তরমুছুনThank you
মুছুন👌👌
উত্তরমুছুনFeel free to comment for any query!