Ticker

6/recent/ticker-posts

মেডিকেল ভর্তিপরীক্ষা ও ঈমানের স্খলন


মেডিকেল ভর্তিযুদ্ধ প্রতি বছরই হয় ৷ ফলাফল ও যথারীতি প্রকাশ হয় ৷ আর ফলাফল প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথেই কিছু পরিচিত মুখ স্মৃতির পটে ভেসে উঠে ৷ তবে তা এজন্য নয় যে তারা খুব নামিদামি মেডিকেলে চান্স পেয়েছেন ৷ বরং চান্স না পাওয়ার হতাশা তাদেরকে জীবনকে কতটা অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলেছিল সেটাই ভাবি ৷ অধিকাংশই পরীক্ষার আগে অনেক বেশি আল্লাহকে ডেকেছেন ৷ কিন্তু তারপরও চান্স না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত নামাজ কালামই ছেড়ে দিয়েছেন ৷ এমনকি অনেকের তো আল্লাহর উপর থেকে বিশ্বাসই উঠে গেছে ৷ এবং এ ঘটনার প্রতি বছরের পুনরাবৃত্তিতে ঠিক কত সংখ্যক ঈমানদার পথভ্রষ্ট হচ্ছে কিংবা কতজন অবিশ্বাসী তৈরি হচ্ছে তার পরিসংখ্যান না থাকলেও সংখ্যাটা নেহায়েত কম না ৷ এটা আসলেই চিন্তার বিষয় ৷ আমার মতে এই সবকিছুর মূলে আছে আল্লাহ ও তার দ্বীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব ৷আর এর কারণ অনুসন্ধানের প্রচেষ্টায় কিছু বিষয় আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে ৷

১) পরকাল সম্পর্কে যথার্থ ধারণা: 

 মুমিনের অবশ্যই মনে রাখা উচিত যে তার জীবন দুটো ৷ ইহকাল ও পরকাল ৷ ইহকাল তথা দুনিয়া হল শস্যক্ষেত্র আর সাফল্য - ব্যার্থতা নির্ধারিত হবে পরকালে ৷ অর্থাৎ দুনিয়ায় সাফল্য কেবল সেটাই যেটা আখিরাতে তাকে সাফল্য এনে দেওয়ার সোপান হবে ৷ তবে দুনিয়াবি জীবনে আখিরাতের সাথে সম্পর্কহীন কোন কিছুকে যদি সে সাফল্য হিসেবে মূল্যায়ন করেও থাকে,  তথাপি এটা তার জীবনের খুব ক্ষুদ্র অংশ হিসেবেই বিবেচ্য হওয়া উচিত ৷ এমন বিষয় কখনোই মুমিনের জীবনের ' সবকিছু ' হতে পারেনা ৷এটা কিভাবে সম্ভব যে, এমন কিছুকে ঘিরেই মুমিনের সব আশা,সব প্রচেষ্টা, সব দোয়া আবর্তিত হবে, যার আখিরাতের সাথে কোন সম্পর্কই নেই ! সারকথা এই দাঁড়াল যে, ' এইম ইন লাইফ ' ঠিক করার ক্ষেত্রেই গলদ রয়ে গেছে ৷ যতটা গুরুত্ব কেবল আখিরাতের প্রাপ্য, তা দুনিয়ার কিছু একটাকে দেওয়া হয়েছে ৷

২) দোয়া করা এবং কবুল হওয়া

এটা সত্যি যে কি আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে তিনি খালি হাতে ফিরিয়ে দেন না ৷ কিন্তু দোয়া কবুল হওয়ার জন্য কিছু শর্ত অবশ্যই আছে ৷ যেমন:  ✘ যা চাইছে তা তার জন্য কল্যাণকর হতে হবে ৷ ✘ ব্যক্তির উপার্জন হালাল হতে হবে ৷ ✘ আল্লাহর নির্ধারিত নিয়মকানুনের মধ্যে চাইতে হবে, মানে হারাম কিছু চাওয়া যাবেনা ৷ ✘ গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তির দোয়া অনেকসময় কবুল হয়না ৷ ✘ অত্যাচারীর দোয়া কবুল হয়না ইত্যাদি ৷
অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে আগে তওবা করে গুনাহর কাজ ছেড়ে দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করতে হবে,  তারপরই কেবল দোয়া কবুলের আশা করা যেতে পারে ৷ এবার জানার চেষ্টা করি কিভাবে দোয়া কবুল হয় সে সম্পর্কে ৷ দোয়া তিনভাবে কবুল হয় :

১. যা চেয়েছি তা যদি আমার জন্য কল্যাণকর হয় তবে আল্লাহ তাই দেন ৷
২. তা না হলে যেটা আমার জন্য অধিকতর কল্যাণকর তা দিবেন ৷
৩. দোয়ার বিনিময় দুনিয়াতে না দিয়ে আখিরাতে দিবেন ৷ 

এক্ষেত্রে প্রথমটাই কেবল আমরা স্বচক্ষে দেখি ৷ আর যা চেয়েছি তা না পেলে ভাবি,  ' আল্লাহ আমার কথা শোনেননি!  ' অতঃপর আল্লাহর কাছে চাওয়া বন্ধ করে দিই!  অথচ ভেবে দেখুন তো তৃতীয় পন্থায় দোয়া কবুল হলেই কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রতিদান পাওয়া যাবে ৷ কেননা তা পেতে হলে যে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে ৷ তাতে উত্তীর্ণ হলে পুরষ্কারও সেইরকম বড়সড় আশা করা যায় ৷ তার মানে কি দাঁড়াল ? আল্লাহ সবার ডাকই শোনেন ৷ প্রতিদানও অবশ্যই দেন ৷ তবে চর্মচক্ষু দিয়ে তা আমরা সবসময় অনুভব করতে পারিনা , এই যা!

৩) আল্লাহ সম্পর্কে ধারণা:

আল্লাহ রব্বুল আ'লামীন বিশ্বজাহানের একচ্ছত্র অধিপতি ৷ আমরা তার ইবাদাত করি বা না করি,  এতে তার কিছুই আসে যায়না ৷ আমরা তাঁর ইবাদাত করি আমাদের নিজেদের স্বার্থে , নিজেদের মুক্তির জন্যই ৷ তাই রাগ করে তাঁর ইবাদাত না করলে নিজেকেই শাস্তি দেওয়া হবে,  তাঁর কোন ক্ষতি তো আর হবেনা ! 
তাছাড়া ' কিছু একটা পাইনি বলে আর কখনোই কিছু চাইবনা ' যুক্তিটা আসলেই হাস্যকর ৷ যা পাইনি তা তো পেলামইনা,  ভবিষ্যতে যা পাওয়ার ছিল তাও হারালাম ! তাছাড়া মুমিন হিসেবে তো এক আল্লাহকেই বিশ্বাস করি ৷ যদি অনেকগুলো উপাস্য থাকত ( নাউযুবিল্লাহ)  তাহলে একজনের উপর রাগ করলে আরেকজনের কাছে যাওয়ার সুযোগ থাকত ৷ কিন্তু সেটা তো সম্ভবই না ৷ যা চাইতে হবে এই এক আল্লাহর কাছেই তো চাইতে হবে ৷ আমি যদি মুখ ফিরিয়ে নেই তাহলে তিনিও মুখ ফিরিয়ে নেবেন ৷ কারণ তিনি তো আমার মুখাপেক্ষী নন ৷ উল্টো আমিই তার মুখাপেক্ষী ৷ 
অভিমান যদি করতেই হয় তাহলে এভাবে করি না কেন:  " হে আল্লাহ! যেহেতু  তুমি আমার এত্ত বড়ো একটা আশা অপূর্ণ রেখেছে , সেহেতু এর চেয়ে অনেক অনেক বড় কিছু আমাকে দিবা ... ৷ " এটা কখনোই ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে,  আল্লাহই তাঁর বান্দাহকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন ৷ তাই বান্দাহর সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা তার উপর কখনোই চাপিয়ে দেন না ৷


আরো পড়ুন: 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ